এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
কাহাকে?

সূর্য্যের মত জ্যোতিষ্মান গৌরবমণি দেখিতে চাই। সংসার যেমনই হৌক, পৃথিবীতে সে আমাকে স্বর্গ দেখাইবে, আমি তাহাতে দেবতা পাইব। অন্যে শুনিলে ইহা বৃথা কল্পনা বলিয়া উপহাস করিবে—কিন্তু আমার অনভিজ্ঞ হৃদয়ে ইহা আকাশকুসুম নহে, প্রকৃত সত্য, কিন্তু এ সত্য আমি অন্যকে কি করিয়া বুঝাইব? কেবল তাহাই নহে, আমার স্বামীর বর্ত্তমানটুকু লইয়াই আমি সস্তুষ্ট নহি, অতীতে বর্ত্তমানে ভবিষ্যতে তাঁহার সমস্ত জীবনে আমি আপনাকে বিরাজিত দেখিতে চাই, তাঁহার জীবনের কোন ভাগ যে আমাছাড়া ছিল বা কখনো তাহার সম্ভাবনা আছে, আমার সর্ব্বগ্রাসী প্রেমাকাঙ্ক্ষী এ চিন্তা সহ্য করিতে পারে না, এ সম্বন্ধে আমার হৃদয় পুরুষের ন্যায়,—পুরুষ পত্নীতে যেরূপ অক্ষুণ্ণ অমর পবিত্রতা, অনাদি অনন্ত নিষ্ঠতা চাহেন, আমি তেমনি আমার স্বামীর সমস্ত জীবনই আমার বলিয়া অনুভব করিতে চাহি।

 আমার এ আকাঙ্ক্ষায় সহানুভূতি কে করিবে? আমি কি করিয়া বুঝাইব যে আমি তাঁহাকে ক্ষমা করিতে পারি— বিবাহ করিতে পারি—তিনি আমার স্বামী হইতে পারেন কিন্তু আমার হৃদয়ের আদর্শ আকাঙ্ক্ষা তিনি পূর্ণ করিতে পরিবেন না। তাঁহাকে হৃদয়মন্দিরে স্থান দিতে গিয়াছিলাম সত্য কিন্তু তাহা ভ্রমক্রমে; মোহভঙ্গে পরিত্যক্ত বিসর্জ্জিত ভগ্ন অঙ্গহীন মূর্ত্তিকে হৃদয়ে স্থাপন করিলে হৃদয়ের শোভা হইবে না, জীবন পর্য্যন্ত তাহাতে বিকৃত বিরূপ হইয়া পড়িবে। রমণীতে এরূপ পৌরুষিক হৃদয়ভাবের কি সহানুভূতি আছে? তাই নিরুত্তর হইয় গেলাম।