ইংরাজি ব্যুৎপত্তি প্রতিপত্তি কিছু কম তাহা নহে, আমিও লোরেটা কন্ভেণ্টে শিক্ষা লাভ করিয়াছি, বাবাকে জ্যেঠাইমাকে ও পিসিমাকে ছাড়া আর কাহাকেও চিঠি পত্র লিখিতে হইলে ইংরাজিতেই লিখিয়া থাকি; সখীদিগের সহিত কথাবার্ত্তাও অনেক সময়ে ইংরাজিতেই চলে; আর এপর্য্যন্ত যে কত শত ইংরাজি কবিতা উপন্যাস মস্তিষ্কজাত করিয়াছি তাহার ত ঠিক ঠিকানাই নাই। সত্য কথা বলিতে কি, দেশের ভাষা হইতে এই পরদেশী ভাষাটাকে অধিকতর আয়ত্তীভূত করিয়া লইয়াছি বলিয়াই বরঞ্চ এতদিন মনে মনে একটা গর্ব্ব অনুভব করিতাম, কিন্তু এ চিঠি লিখিতে বসিয়া সে ভুল আমার ভাঙ্গিল। এ ধরণের পত্র লিখিবার প্রয়াস এই আমার প্রথম। এক একটী মনোমত শব্দের চিন্তায়, ভাব ও ভাষার সুন্দর সঙ্গতিতে এক একটী সুললিত পদবিন্যাসের প্রয়াসে উৎকণ্ঠিত গলদ্ঘর্ম্ম হইয়া উঠিলাম। চিঠিখানি কতবার লিখিলাম, কতবার ছিঁড়িলাম তাহার ঠিক নাই। যেখানির ভাব ঠিক হয়—তাহার ভাষা ঠিক হয় না, যাহার বা ভাষা পসন্দ হয়—তাহাতে আমার মনের ভাব সুস্পষ্ট প্রকাশ হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। দৈবক্রমে কোনখানিতে ভাব ও ভাষার একরূপ নির্দ্দোষ সমম্বয় হইলে ও তখন ভাবনা জন্মে, ইহা ঔপন্যাসিক রস যুক্ত সুরচনা হইয়াছে কি না? এমন কি একটা in এবং to শব্দের স্থানান্তর সংঘটন সন্দেহে বহুযত্নে বহু সময় ধরিয়া লিখিত প্রায়-সমাপ্ত পত্রখনিও মুহূর্ত্তে শতছিন্ন হইয়া পড়ে,—এ অবস্থায় কি চিঠি শেষ হয়? এই চিঠি লিখিতে বসিয়া প্রথম আমি মাতৃভাষার সহজ গৌরব উপলব্ধি করিলাম। দশ এগার বৎসর বয়স পর্যন্ত রীতিমত যা বাঙ্গ্লা শিখিয়া-
পাতা:কাহাকে?.djvu/৫৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
কাহাকে?