হৃদয়ের কথা বলার না থাকে, সে তখন বেশ অসঙ্কোচে অনর্গল বলিয়া বা লিখিয়া যাইতে পারে, কিন্তু সত্য সত্যই বলিবার কথা বিশেষ কিছু থাকিলেই তাহা তখন বলা দায় হইয়া উঠে, তখনই, সে কথা কি ভাবে প্রকাশ করিব, কিরূপ আকৃতিতে তাহ সুস্পষ্ট অথচ নিখুঁত হইবে—এই চিন্তায় এই সঙ্কোচে, প্রকাশে শত সহস্র বাধা আসিয়া পড়ে। তাই একবার মনে হয়—ইংরাজিতে না লিখিয়া বাঙ্গ্লাতে লিখিলেই কি তাঁহার হাতে পত্রখানি পৌঁছিত? কে জানে!
সপ্তাহ কাটিতে চলিল, তাঁহার আসিবার সময় হইয়া আসিল; দিস্ত দিস্ত কাগজ নষ্ট করিলাম তবু আমার চিঠি শেষ হইল না। বিরক্ত হইয়া লেখা বন্ধ করিলাম—মনকে বুঝাইলাম তিনি ত শীঘ্রই আসিবেন, আর লেখার সময়ই বা কৈ, আবশ্যকই বা কি? দেখা হইলে মুখেই সব বলিব, চিঠিতে কি অত কথা বলা যায়? কেন লিখি নাই কারণ শুনিলে তিনিও ইহাতে কিছু মনে করিবেন না।
এক সপ্তাহ মাত্র তাঁহার মফঃস্বলে থাকিবার কথা—দশ বার’ দিন হইল তবু তিনি ফিরিলেন না। দিদি একদিন রাত্রে ডিনার পার্টি হইতে ফিরিয়া পরদিন সকালে আমার সহিত প্রথম দেখা হইবামাত্র সহসা জিজ্ঞাসা করিলেন—“তার চিঠিপত্র পেয়েছিস?”
কি জানি প্রসঙ্গ ক্রমে যদি দিদি জানিতে পারেন যে সে চিঠির এখনো উত্তর দেওয়া হয় নাই; তাহা হইলে, একে নিজের মনের জ্বালায় জ্বলিতেছি তাহার উপর কর্ত্তব্য ত্রুটির উপদেশে ক্ষত স্থান লবণ জর্জ্জরিত হইয়া উঠিবে, এই ভয়ে আমি