পরমানন্দ লাভ করেন। আমি বলিলাম—“তিনি যখন বলেছেন তখন ত কথাটার মধ্যে কোন সত্য না থাকারই বেশী সম্ভাবনা।”
“কিন্তু শুনছি রমানাথ পরশু এসেছে—কাল এখানে এলনা কেন? আগে হোলে কি তা করত?”
আমার মনে তখনো তাঁহার ভালবাসার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস, তাঁহার বিদায় কালের কাতরোক্তি তখনো মনে সুম্পষ্ট বাজিতেছে, তাহার পত্রের প্রীতিময় বাক্য তখনো হৃদয় অনুকম্পিত ব্যথিত করিতেছে, আমি কি বাহিরের সামান্য একটা গুজবে বা একদিন তাঁহার আসিতে বিলম্ব দেখিয়া সে মহা বিশ্বাস হারাই? আমি বলিলাম—“দিদি তুমি যেন কি? কাল আসতে পারেন নি আজ আসবেন এখন, তাতে আর এতই হয়েছে কি? কিছুদিন আগে তাঁর সৌজন্যে তোমার এতটা গভীর বিশ্বাস ছিল—আর সামান্য একটা গুজবে সমস্ত হারিয়ে ফেল্লে। যদি তাঁর ভালবাসা মিথ্যা না হয় তাহলে এ গুজব সত্য হতে পারে না—আর গুজবটা যদি সত্যি হয় তাহলে ত তাঁর ছলনা হতে মুক্তি পাওয়া গেল। তাতে দুঃখ করার কি আছে বল?”
দিদি চুপ করিয়া গেলেন। ভক্ত ঐশ্বরিক প্রেমে বিশ্বাস করিয়া যে আনন্দ লাভ করে, আমি তাঁহার প্রেমে বিশ্বাস করিয়া যেন সেইরূপ আনন্দ পূর্ণ হইলাম। যিনি ভুক্তভোগী তিনিই মাত্র জানেন—এ ভক্তি বিশ্বাস জগতে কিরূপ অমূল্যধন, এ বিশ্বাসে কি পরমানন্দ; অপ্রেম হৃদয়ে ইহাতে প্রেম ফুটায়; সপ্রেম হৃদয় ইহাতে চিরপ্রেমময় হইয়া উঠে; আর এই বিশ্বাসের অভাবে প্রজ্জ্বলন্ত প্রেমও ক্রমে নিস্তেজ নির্ব্বাপিত শীতল হইয়া পড়ে।