অষ্টম পরিচ্ছেদ।
ডিনারে রাত জাগিয়া দিদি তাঁহার ঘরে দিবা নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন, আমি ড্রয়িংরুমে জানালার পাশে ইজিচেয়ারে বসিয়া একখানি নভেল পড়িবার চেষ্টা করিতেছিলাম –কিন্তু কিছুতেই তাহাতে মন বসিতেছিল না। কিছুদিন পূর্ব্বে পরীক্ষার রাশি রাশি পাঠের মধ্যেও ফাঁকি দিয়া যখন নভেল শেষ করিতাম—তখন মনে হইত সারা জীবন যদি উপন্যাসের মধ্যে আপনাকে ডুবাইয়া রাখিতে পারি, তাহা হইলেই আমার জীবনের পরম ও চরম সুখ লাভ হয়—আমি আর সংসারে অন্য কিছু চাহি না। কত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের সুখের কল্পনা পরিবর্ত্তিত হয়, একবৎসরও তাহার পর অতীত হয় নাই!
চোখের উপর খোলা কেতাব, যন্ত্রের মত হরফগুলি নিঃশব্দে আওড়াইয়া যাইতেছি—অথচ খানিক পরে আত্মস্থ হইয়া দেখিতেছি এক অক্ষরও তাহার হৃদয়ঙ্গম হয় নাই—আসলে পড়িতেছি না ভাবিতেছি, কিন্তু কি ভাবিতেছি তাহারও একটা ঠিক ঠিকানা নাই, অস্পষ্ট অসংযত বিশৃঙ্খল ভাবনা,—মনের মধ্যে একটা কেমন অশান্ত বিদ্রোহী বাসনা, উপস্থিতের উপর বিতৃষ্ণা, অনুপস্থিতের জন্য আগ্রহ,–কিন্তু সে অনুপস্থিত যে কি, তাহার আকৃতি কিরূপ-স্থিতিই বা কোথায়, তাহা সে ভাবনার মধ্যে নাই। মাঝে মাঝে এক একবার পূর্ব্বাকাশে দৃষ্টি পড়িতেছিল— উদার স্তব্ধ সৌন্দর্য্যদৃশ্যের মধ্যে আমার উদাসচিত্ত স্বপ্নের মত