এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
৫৭

প্রবল ইচ্ছাও বিসর্জ্জন করিতে পারি, কিন্তু ক্রোধে কি আমাকে বশ করিতে পারে? সেদিন যদি তিনি আমার কথায় রাগ করিয়া রূঢ়বাকো আমাকে অভিশম্পাৎ দিতেন, প্রতিশোধ লইবেন বলিয়া শাসাইতেন, তাহা হইলে কি তাঁহার বেদনা আমি অনুভব করিতাম-না তাহা নিবারণের জন্যই এত ব্যাকুল হইতাম? সম্ভবতঃ তাঁহার প্রতি অশ্রদ্ধা অভক্তিরই উদ্রেক হইত। প্রেমের আশঙ্কাই প্রবল আশঙ্কা। যে ভালবাসে, যাহাকে ভালবাসি—তাহাকে ব্যথা দিতে প্রাণে যেমন বাজে এমন আর কিসে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নহে; প্রেমময় করুণ দৃষ্টিই প্রকৃত পক্ষে fatal—dangerous; তাঁহার বিদায় কালের সেই সকরুণ দৃষ্টি মনে জাগিল। লেখকও যে শেষ অর্থে এ তুলনা ব্যবহার করিয়াছেন তাহাতে আমার আর তখন সন্দেহ রহিল না। সময়ে সময়ে জোয়ার আসিয়া শুষ্ক তীরস্থিত বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে যেমন সহসা ভাসাইয়া লইয়া যায়—এই সকরুণ দৃষ্টিও সেইরূপ নিঃশব্দে হৃদয় অধিকার করে—তখন লোকে বিপদ জানিয়া শুনিয়াও আর ফিরিতে পারে না, অধিকাংশ সময় ফিরিতে চাহেও না, ইচ্ছা করিয়া তাহাতে আপনাকে ভাসাইরা দেয়; সেই জন্যই ইহা অধিক ভয়জনক।

 জুতার শব্দে চিন্তাভঙ্গ হইল, চমকিয়া ফিরিয়া চাহিলাম, দেখিলাম তিনি। তাঁহার ভাব তেমন সহাস্য নহে, গম্ভীর বিষণ্ন ভাবে গৃহে প্রবেশ করিয়া নীরবে হাত বাড়াইয়া দিলেন, নীরবে সেক্‌হ্যাণ্ড করিয়া নিকটের একখানি চৌকিতে বসিলেন। তাঁহাব ভাব দেখিয়া আমিও দমিয়া গেলাম, বুঝিলাম চিঠি না পাইয়া ক্ষুণ্ন হইয়াছেন, অথচ তাঁহাকে প্রফুল্ল দেখিলে আমি