দশম পরিচ্ছেদ।
চারিদিকেই অশান্তি অসুখ, নিরানন্দ ভাব। দিদি স্তব্ধ গম্ভীর, ভগিনীপতি অকারণক্রুদ্ধ, ভৃত্যদিগের প্রতি অযথা ভর্ৎসনাপরায়ণ, দাসদাসীগণ শশব্যস্ত ত্রস্ত ভীত, এমন কি বাড়ীর গাছপালা ঘরদরজা প্রভৃতি অচেতন জড়পদার্থগুলা পর্য্যন্ত যেন তাহাদের স্বাভাবিক প্রিয়দর্শনতা শূন্য, সমস্ত বায়ুমণ্ডলে কেমন যেন একটা স্তব্ধ অস্বস্তি বিষাদ বিকম্পিত। আমিই ইহার কারণ, আমার মনে কি অন্ধকার গুরুভার। এমন দিনে আবার পিসিমা তাঁহার কন্যা প্রমোদাকে লইয়া এখানে মধ্যাহ্নভোজনে আসিলেন। মনের ভার মনে চাপিয়া আমরা যথাসাধ্য তাঁহাদের মনোরঞ্জনে তৎপর হইলাম। প্রমোদা প্রশ্নের উপর প্রশ্নে আমাকে বিব্রত করিয়া তুলিল “কি হইয়াছে? এত রোগা কেন? এমন বিমর্ষ শুকনো কেন? তিনি মফঃস্বলে গিয়াছেন বলিয়া বুঝি? শীঘ্রই আসিবেন সে জন্য এতটা কেন? বিবাহ ত হইবেই—একটু কি সবুর সয় সয়না,”-ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন আর সেকাল নাই, অন্যান্য অনেক আচার অনুষ্ঠানের ন্যায় সখীদিগের নিকট মন খুলিয়া মনের জ্বালা নিবারণ করিবার প্রথাও নিতান্ত পুরাতন হইয়া পড়িয়াছে, একালের মেয়েদের মনের দুঃখ সহজে মুখে ফুটিতে চাহে না; বিশেষতঃ এমনতর দুঃখ, ইহাত কিছুতেই প্রকাশের নহে,—আমি মনের কথা মনে রাখিয়া কাষ্ঠ হাসি এবং বাকচাতুরীতে তাহাকে ক্রমশঃ নিরুত্তর করিলাম।