এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্রথম পরিচ্ছেদ।

যদি বাবাকে দখল করিতেন বা তাঁহার কোন কাজ করিয়া দিতেন আমার ভাল লাগিত না। সন্ধ্যাবেলা আহারান্তে বাবা বিছানায় শুইয়া গুড়গুড়ি টানিতেন; দিদি যখন থাকিতেন তখন আমরা দুই বোনে দুই পাশে গিয়া শুইতাম, কিন্তু বাবার গলা জড়াইয়া থাকা আমারি একচেটিয়া ছিল। দুই হাতে কণ্ঠ বেষ্টন করিয়া কাণে কাণে কথা হইত-বাবা তুমি কাকে ভালবাস? মনের মধ্যে পূর্ণ বিশ্বাস আমাকেই ভালবাসেন, তিনি কিন্তু তাহা বলিতেন না, বলিতেন দুজনকেই ভালবাসি। উত্তরে সস্তুষ্ট হইতাম না, অসন্তুষ্টও হইতাম না; কেননা তিনি যাহাই বলুন, আমার মনে হইত আমাকেই ভালবাসেন। আমি কাণে কাণে বলিতাম-—“দিদি রাগ করবেন বুঝি?” বাবা হাসিতেন, আমার বিশ্বাস মনে আরো দৃঢ় হইয়া আঁটিয়া বসিত। তথন আমার বয়স কত জানি না—বোধ হয় ৫।৬ বৎসর হইবে। শীতকালে বাবার গায়ে যথেষ্ট গরম কাপড় থাকিলেও আমার গায়ের ছোট রুমাল খানি দিয়া যতক্ষণ তাঁহাকে না ঢাকিতাম, ততক্ষণ মনে হইত তাঁহার শীত ভাঙ্গিতেছে না। গরমী কালে টানাপাখা যতই হউক না কেন, মাঝে মাঝে হাতপাখা না করিলে আমার তৃপ্তি বোধ হইত না। দাসদাসীর অভাব নাই কিন্তু আমি সুবিধা পাইলেই কুটনা কুটিবার আড্ডায় গিয়া বঁটি একখানা টানিয়া আলুটা, পটলটা যাহা সম্মুখে পাইতাম তাহার উপরেই আঁচড় পাড়িবার অভিপ্রায়ে আঙ্গুলে আঁচড় পাড়িয়া বসিতাম, আর রান্নাঘরে গিয়া বামুনদিদির ভাতের কাটি কাড়িয়া লইয়া ডাল, মাছেরঝোল, অম্বল নির্ব্বিচারে সবই ঘুঁটিবার প্রয়াস পাইতাম, কখনো বা ব্রাহ্মণীকে স্তুতি মিনতিতে বশ