সাধ্য থাকিলে এই মুহূর্ত্তে কি ইহা বিলোপ করিতাম না! যে কর্ম্মের উপর আধিপত্য নাই, তাহারো ফল আছে? সে জন্যও মানুষ দায়ী! তাহার নিমিত্ত এই ভয়ানক শাস্তি! তবে মানুষকে এত ক্ষুদ্র এত তুচ্ছ, এত দুর্ব্বল করিয়া গড়িয়াছ কেন প্রভু! দুর্ব্বল অসহায়ের প্রতি তোমার করুণ কোথায় তবে? অবশ্যই আছে! কেবল কর্ম্মফলে সংসার চলিলে এতদিন ইহা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইত। আমিই বা আজ কোথায় থাকিতাম! যে করুণায় বল্যে কৈশোরে অসংখ্য রোগশোক দুঃখ তাপের অবসান করিয়া জীবনে সুখ শান্তি বিধান করিয়াছ, হে নাথ-করুণাময় তোমার সেই অনন্ত করুণাবারি বর্ষণে—”
প্রার্থনা অসম্পূর্ণ রহিয়া গেল; কি ভিক্ষা করিতে যাইতেছি! ঈশ্বরের করুণা আহ্বান করিয়া যাহাকে ভালবাসি তাহাকে পাইতে চাহি! আমার সুখের জন্য অন্যের সুখে অভিশম্পাৎ প্রার্থনা করিতেছি! প্রার্থনার সহজ উচ্ছাস সহসা স্তম্ভিত হইয়। গেল, করপুট শিথিল হইয়া পড়িল, আমি সেইখানেই শুইয়া পড়িয়া অধীর বেদনায় মনে মনে কহিলাম—“তোমার করুণা! প্রভু, তোমার করুণা! আমার মঙ্গলের জন্য যে কষ্ট যে দুঃখ বিধান করিতে চাহ আমি যেন ধীরভাবে তাহ সহ্য করিতে পারি; করুণা করিয়া এই বল দাও নাথ।” কাঁদিয়া কাঁদিয়া প্রার্থনা করিতে করিতে সেই অবস্থাতেই কখন ঘুমাষ্টয়া পড়িলাম জানিনা। যখন জাগিয়া উঠিলাম, তখন পূর্ব্ব রাত্রের সেই বেদনাময় অনুভূতি লইয়াই জাগিয়া উঠিলাম। সেই ছবি সেই দৃষ্ট মনোনেত্রে দেখিতে দেখিতেই জাগিয়া উঠিলাম।—