প্রাণের মধ্যে সারাদিন কি যে আগুণ জ্বলিতেছে, কাজে কর্ম্মে গল্পে কথায় তাহার নিবৃত্তি নাই। যতই ভাবি ‘আর না আর না’ ততই ইঁহাকে ভাবি; ভুলিতে চেষ্টা করিয়া দর্শনতৃষায় আরো ব্যাকুল হইতে থাকি; বায়ুর শব্দে নিরাশ মনে বাতুল আশা জাগাইয়া তোলে—মোহভঙ্গে দগ্ধ হৃদয়ে বেদনাধ্বনি ওঠে—“একবার একবার কি আর দেখা পাইব না! আর কিছু না—যদি শুধু মাঝে মাঝে দেখা পাইতাম! হৃদয় ভাগিনী নহে—যদি সামান্য বন্ধুত্বভাগিনীও হইতে পারিতাম! তাহ হইলেই কি আমার জীবন জন্ম সার্থক হইত না? কোথায় সে গর্ব্বিত অপমান বোধ!
এইরূপ দাবানল হৃদয়ে বহিয়া দিন কাটে। ভবিষ্যতে কি হইবে, কে জানে, কালে ইহার শান্তি আছে কিনা জানি না, কিন্তু পুড়িতে পুড়িতে জ্বলিতে জ্বলিতে এখন মনে হয়—এমনি নিরাশাময় আশা, বেদনাময় আকুলতায় জীবন জ্বলিয়া পুড়িয়া যখন ভষ্মসাৎ হইবে তখনি মাত্র ইহার শান্তি! সুদীর্ঘ জীবনের দিকে চাহিয়া শিহরিয়া উঠি। ইহাই কি প্রেম? যে তৃষ্ণায় তৃপ্তি নাই, যে আকাঙ্খায় নিবৃত্তি নাই, যে আশায় সফলতা নাই, তাহাই কি প্রেম? কে জানে!
ইহার তিন চারিদিন পরে চঞ্চলের সহিত দেখা। তাহাদের রাড়ীতেই দেখা। আমাদের দুজনে খুব ভাব। বেশী না হউক অন্ততঃ পক্ষে সপ্তাহে একবার করিয়া দিনান্ত ধরিয়া আমরা দুজনে একত্র কাটাই। কোনবার বা সে আমাদের বাড়ী আসে— কোনবার বা আমি তাহাদের বাড়ী যাই। তাহার নজর এড়াইতে পারিলাম না; আমাকে দেখিবা মাত্র আমার শুষ্ক বিষণ্ন