পাতা:কিন্নর দল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিল্লর দল - לל ל তঁর পিছু পিছু র্তার ঘরের দিকে গেলুম। তিনি গিয়ে তঁর ঘরের তালা খুললেন। অপরিস্কার ও অপরিসর ঘর। দেওয়ালে কতকগুলো ক্যালেণ্ডার টাঙানো । একপাশে একখানা বিবেকানন্দের ছবি । মেঝের ওপর একটা খার্টিয়া পাতা, তার ওপর আবার একটা কালো ও তেল চিটুচিটে বালিস। মাস্টার মশাই আমায় বসিয়ে ‘আসছি’ ব’লে কোথায় চলে গেলেন সহসা । আর আমি তার ঘরখানা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলুম। বড় দুঃখ হ’ল তার দারিদ্র্যাক্লিষ্ট অবস্থা দেখে। ঘরের মধ্যে আর একখানা কাপড়ও নেই। যদিও বা একখানা আছে তাও শতছিন্ন এবং অত্যন্ত কালো। একটি জামা ও একখানি মাত্র কাপড়ে তাকে দিন কাটাতে হয়। আমার বড় অনুকম্প জাগল তঁার প্রতি । তাকে যে আমি এত ঘৃণা করতুম তা একেবারে বিস্মৃত হলুম। হঠাৎ যেন আমি একেবারে বদলে গেলুম। এমন সময়ে মাস্টার মশাই এক ঠোঙ্গা খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। আমি ব্যথিত সুরে বললুম, ও সব আবার কেন মাস্টার মশাই ? তিনি আমার কথা শুনে একটু যেন আশ্চৰ্য্যান্বিত হলেন। আমতা আমতা করতে লাগলেন, না-না, এ আর এমন কি ? আমি বুঝলুম যে তাঁর শ্রমের পারিশ্রমিকটা এমন করে অপচয় করা তার শরীরের বিন্দু বিন্দু রক্ত গ্ৰহণ করার সামিল। আমি তীব্ৰ প্ৰতিবাদ করলুম, না, এ কখনই হবে না। আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দেখে তার মুখের চির প্রফুল্ল হাসি অকস্মাৎ যেন মিলিয়ে গেল। তিনি মুখ চুণ করে বললেন, এ কি বলছে পিণ্ট, ? আর সাহস হল না কিছু বলতে। যাই হোক, বাড়ী ফেরবার পথে সেদিনই আমি প্ৰতিজ্ঞা করলুম। যে মাস্টার মশাই যাতে আমাদের জন্যে ষ্ঠার মাইনে থেকে কিছু খরচ না করেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। হাজার হোক বেচারা ঐ ক’টি টাকা সম্বল ক’রে কলকাতায় বাস করছেন।