পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১]
কুরু পাণ্ডব
২০৩

অভিমন্যু নির্ভীকচিত্তে একমাত্র অবশিষ্ট চক্র ধারণপূর্ব্বক দ্রোণের প্রতি ধাবিত হইলেন। সেই সময়ে বীরগণ-পরিবৃত শোণিতানুলিপ্ত-কলেবর অপ্রাপ্তবয়স্ক কুমার অপূর্ব্বরূপ ধারণ করিলেন। ভূপতিগণ সেই অলৌকিক তেজোদীপ্তি সন্দর্শনে উদ্বিগ্ন হইয়া সমবেত অস্ত্রবর্ষণদ্বারা সেই চক্র খণ্ড খণ্ড করিলেন।

 সেই অবসরে দুঃশাসনপুত্র গদাহস্তে তাঁহার উপর নিপতিত হইয়া তাঁহার মস্তকে গদাঘাত করিল। সেই অকস্মাৎ আঘাতে তরুশ্রেণী মর্দ্দনান্তর নিবৃত্ত সমীরণের ন্যায় হন্ত্যশ্বরথসহ অসংখ্য বীর নিপাতনান্তে সেই পূর্ণচন্দ্রনিভানন অভিমন্যু ভূ-বিলুণ্ঠিত হইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।

 তখন কৌরব সৈন্যমধ্যে মহা হর্ষধ্বনি উত্থিত হইয়া গগনভেদ করিলে পাণ্ডবগণ এই শোচনীয় ঘটনা পরিজ্ঞাত হইলেন। সৈন্যগণ অতিশয় ভীত হইয়া যুধিষ্ঠিরের সমক্ষেই পলায়নের উপক্রম করিল। যুধিষ্ঠির কহিলেন—

 হে বীরগণ! মহাবাহু অভিমন্যু একাকী বহু সৈন্যমধ্যে পতিত হইলেও সমরে পরাঙ্মুখ না হইয়া ক্ষত্রিয়ের পরমগতি লাভ করিয়াছেন। তোমরা তাঁহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ কর, পলায়ন করিও না।

 এই বাক্যে লজ্জিত হইয়া পাণ্ডব-যোদ্ধৃগণ দুর্দ্দান্তবেগে কৌরবগণকে আক্রমণপূর্ব্বক বিমুখ করিলেন। এই সময় দিন ও রজনীর সন্ধিস্থল উপস্থিত হইলে মরীচিমালী অস্ত্রসকলের প্রভাহরণপূর্ব্বক রক্তোৎপলতুল্য কলেবরে অস্তাচলচূড়া অবলম্বন করিলেন। তখন উভয়পক্ষ সমর-