পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
কুরু পাণ্ডব
[১১

ব্যায়ামে একান্ত অবসন্ন হওয়ায় সংগ্রামস্থল দেখিতে দেখিতে জনশূন্য হইল।

 পাণ্ডববীরগণ অতিশয় বিষণ্ণ-চিত্তে রথ কবচ ও শরাসন পরিত্যাগপূর্ব্বক অভিমন্যুর চিন্তায় ভারাক্রান্ত অন্তঃকরণে যুধিষ্ঠিরের চতুর্দ্দিকে উপবিষ্ট হইলেন। ধর্ম্মরাজ অতিশয় কাতর মনে বিলাপ করিতে লাগিলেন―

 হায়! মহাবীর অভিমন্যু আমারই নিয়োগে শত্রুব্যূহমধ্যে একাকী প্রবেশপূর্ব্বক প্রাণত্যাগ করিল। সেই বালকের প্রতি দুঃসহ ভারার্পণ করিয়া তাহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ হইলাম না। অদ্য আমি কিরূপে ধনঞ্জয় ও পুত্রবৎসলা সুভদ্রাকে অবলােকন করিব? আজি জয়লাভ, রাজ্যলাভ বা স্বর্গলাভ কিছুই আর প্রীতিজনক বােধ হইতেছে না।

 লােক-ক্ষয়কর সে ভয়ানক দিনের অবসানে মহাবীর অর্জ্জুন দিব্যাস্ত্রজালে ত্রিগর্ত্তগণকে নিঃশেষে সংহার করিয়া স্বীয় জয়শীল রথে আরােহণপূর্ব্বক বাসুদেবের সহিত যুদ্ধবৃত্তান্ত আলােচনা করিতে করিতে শিবিরে উপস্থিত হইলেন। সেনানিবেশ নিরানন্দ ও শ্রী-ভ্রষ্ট দেখিয়া অর্জ্জুন উদ্বিগ্ন-চিত্তে কহিতে লাগিলেন―

 হে জনার্দ্দন! আজি মঙ্গলতুর্য্য-নিস্বন ও দুন্দুভি-নাদসহ শঙ্খধ্বনি হইতেছে না কেন? যোদ্ধৃগণও আমাকে দেখিয়া অধােমুখে ইতস্তত পলায়ন করিতেছে। হে নাধব! কোন ঘোরতর বিপদ উপস্থিত হয় নাই ত?