পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১]
কুরু পাণ্ডব
২১৭

হইলে তিনি বর্ষাকালীন জলপটলের গভীর গর্জ্জনের ন্যায় ভয়ঙ্কর সিংহনাদ করিলেন।

 পরিচিত ভীমকণ্ঠ শ্রবণে কৃষ্ণার্জ্জুন বারম্বার হর্ষধ্বনি করিয়া তাহার উত্তর প্রদান করিলেন। সেই শব্দ যুধিষ্ঠিরের শ্রুতিগোচর হইলে তিনি একান্ত প্রীতমনে ভীমসেনের প্রশংসা করিয়া ভাবিতে লাগিলেন—

 অহো! ভীম যথার্থ ই আমার আজ্ঞা প্রতিপালনপূর্ব্বক আমাকে অর্জ্জুনের কুশলসংবাদ জ্ঞাপন করিল। এক্ষণে সেই অরাতিবিজয়ী অর্জ্জুনসম্বন্ধে আমার দুশ্চিন্তা তিরোহিত হইল।

 ভীমকে ব্যূহ হইতে উত্তীর্ণ দেখিয়া ধার্ত্তরাষ্ট্রগণ জীবিতাশা পরিত্যাগ করিয়া তাঁহাকে পুনরায় পশ্চাৎ হইতে আক্রমণ করিলেন; কিন্তু মহাবল বৃকোদর স্বীয় প্রতিজ্ঞা পালনপূর্ব্বক তাহাদিগকে একে একে যম-সদনে প্রেরণ করিতে আরম্ভ করিলেন। এইরূপে ধৃতরাষ্ট্রের একত্রিংশ পুত্র নিহত হইলে ভীমকে নিবারণার্থে মহাবীর কর্ণ সূচি-ব্যূহ হইতে অগ্রসর হইয়া আসিলেন।

 তখন উভয় বীরের মধ্যে ঘোর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। কর্ণ অনায়াসে ভীম-নিক্ষিপ্ত অস্ত্রসমুদায় খণ্ড খণ্ড করিলেন। ভীম ধনুর্যুদ্ধ নিষ্ফল দেখিয়া অসিচর্ম্ম ধারণপূর্ব্বক রথ হইতে অবতরণ করিলেন; কিন্তু কর্ণ অস্ত্রদ্বারা সে অসিচর্ম্মও বিনষ্ট করিলেন এবং অস্ত্রহীন ভীমের প্রতি ধাবমান হইলেন। তখন নিরুপায় ভীমসেন পলায়ন করিয়া মৃত-গজ-কলেবরসকলের মধ্যে বিচরণপূর্ব্বক আশ্রয় লাভ করিলেন।