পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
কুরু পাণ্ডব

করিলেন। কিন্তু সেই ভীষণ কার্ম্মুকে জ্যা-সংযােগ করা দূরে থাক, উহাকে কিয়ৎপরিমাণ অনমিত করিতে না করিতেই উহার প্রবল প্রতিঘাতে তাঁহারা ইতস্তুত বিক্ষিপ্ত এবং তাঁহাদের আভরণসকল চতুর্দ্দিকে বিস্রস্ত হইতে লাগিল। ইহাতে বিফলমনোরথ রাজপুত্রগণ লজ্জিত ও নিস্তেজ হইয়া দ্রৌপদীর আশা ত্যাগ করিলেন।

 মহাধনুর্দ্ধর কর্ণ রাজগণকে এই রূপে পরাঙ্মুখ দেখিয়া সত্বর ধনুর নিকট উপস্থিত হইলেন। অনায়াসে তাহা উত্তোলনপূর্ব্বক তিনি সকলকে চমৎকৃত করিয়া সেই প্রচণ্ড কার্ম্মুক জ্যাযুক্ত করিলেন। পরে পঞ্চবাণ হস্তে লইয়া লক্ষ্যের নিকট গমনপূর্ব্বক শরসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলে সকলে ভাবিল― ইনিই লক্ষ্যভেদ করিয়া বরমাল্য প্রাপ্ত হইবেন। পাণ্ডবগণ কর্ণের কন্যালাভ-সম্ভাবনায় নিতান্ত অবসন্ন হইয়া পড়িলেন।

 মহানুভবা দ্রোপদী সকলের মুখে—ইনি রাধেয়, ইনি অধিরথ-পালিত, ইনি সূতপুত্র― এইরূপ শ্রবণ করিয়া এবং অন্যান্য রাজগণের অবজ্ঞার হাস্য অবলোকন করিয়া সহসা বলিয়া উঠিলেন—

 আমি সূতপুত্রকে বরণ করিতে পারিব না।

 এই কথা অভিমানী কর্ণের কর্ণগােচর হইবামাত্র তিনি ঈষৎ বিমর্ষহাস্যসহকারে তৎক্ষণাৎ ধনুর্ব্বাণ পরিত্যাগপূর্ব্বক স্তম্ভিতবৎ সূর্যের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া রহিলেন।

 অর্জ্জুন আর থাকিতে পারিলেন না। তিনি ব্রাহ্মণবেশ বিস্মৃত হইয়া স্বীয় ক্ষত্রিয়তেজ ও কৃষ্ণার রূপমাধুরীর বশবর্ত্তী