কৃষ্ণকান্তের উইল হলাল বা দ্বাৰ। পিতার অবাধ্য এবং দুৰ্ম্মৰ্থ। বাঙ্গালির উইল প্রায় গোপনে । থাকে না। উইলের কথা হরলাল জানিতে পারিল। হরলাল, দেখিয়া শুনিয়া ক্রোধে চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া পিতাকে কহিল, “এটা কি হইল ?” গোবিন্দলাল অৰ্দ্ধেক ভাগ পাইল, আর আমার তিন আনা । - - কৃষ্ণকান্ত কহিলেন, “ইহা ন্যায্য হইয়াছে।” গোবিন্দলালের পিতার প্রাপ্য অৰ্দ্ধাংশ তাহাকে দিয়াছি। - - হর। গোবিন্দলালের পিতার প্রাপ্যট কি ? আমাদিগের পৈতৃক সম্পত্তি সে লইবার কে ? আর মা বহিনকে আমরা প্রতিপালন করিব —তাহাদিগের বা এক এক আন৷ কেন ? বরং তাহাদিগকে কেবল গ্রাসাচ্ছাদনের অধিকারিণী বলিয়া লিখিয়া যান। কৃষ্ণকান্ত কিছু রুষ্ট হইয়া বলিলেন, “বাপু হরলাল! বিষয় আমার, তোমার নহে। আমার যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে দিয়া যাইব ।” হর। আপনার বুদ্ধিশুদ্ধিলোপ পাইয়াছে—আপনাকে যাহা ইচ্ছ, তাহা করিতে দিব না। কৃষ্ণকান্ত ক্রোধে চক্ষু আরক্ত করিয়া কহিলেন,*হরলাল, তুমি যদি বালক হইতে, তবে আজি তোমাকে গুরু মহাশয় ডাকাইয়া বেত দিতাম।” হর। আমি বাল্যকালে গুরু মহাশয়ের গোপ পুড়াইয়া দিয়াছিলাম, এক্ষণে এই উইলও সেইরূপ পুড়াইব । 愈 কৃষ্ণকান্ত রায় আর দ্বিরুক্তি করিলেন না। স্বহস্তে উইলখানি ছিড়িয়া ফেলিলেন। তৎপরিবর্তে নূতন একখানি উইল লিখাইলেন। তাহাতে গোবিন্দলাল আট আনা, বিনোদলাল পাচ আনা, কত্রী এক আনা, শৈলবর্তী এক আনা, আর হরলাল এক আনা মাত্র পাইলেন। রাগ করিয়া হরলাল পিতৃগৃহ ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় গেলেন, তথা হইতে পিতাকে এক পত্র লিখিলেন। তাহার মৰ্ম্মার্থ এই – “কলিকাতায় পণ্ডিতেরা মত করিয়াছেন যে, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত। আমি মানস করিয়াছি যে, একটি বিধবাবিবাহ করিব। আপনি যদ্যপি উইল পরিবর্তন করিয়া আমাকে • আনা লিখিয়া দেন, আর সেই উইল শীঘ্র রেজিষ্টরি করেন, তবেই এই অভিলাষ ত্যাগ করিব, নচেৎ শীঘ্র একটি বিধবাবিবাহ করিব।” হরলাল মনে করিয়াছিলেন যে, কৃষ্ণকান্ত ভয়ে ভীত হইয়া, উইল পরিবর্তন করিয়া, ' হরলালকে অধিক বিষয় লিখিয়া দিবেন। কিন্তু কৃষ্ণকাস্তের যে উত্তর পাইলেন, তাহাতে সে ভরসা রহিল না। কৃষ্ণকান্ত লিখিলেন, W
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।