পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় খণ্ড-নবম পরিচ্ছেদ । ৯৭ রো। কি ? গো । তুমি আমার কে ? রো। কেহ নহি, যত দিন পায়ে রাখেন, তত দিন দাসী । নহিলে কেহ নই। গে। পায়ে ছেড়ে তোমায় মাথায় রাখিয়াছিলাম। রাজার স্যায় ঐশ্বৰ্য্য, রাজার অধিক সম্পদ, অকলঙ্ক চরিত্র, অত্যাজ্য ধৰ্ম্ম, সব তোমার জন্য ত্যাগ করিয়াছি। তুমি কি রোহিণি, যে তোমার জন্য এ সকল পরিত্যাগ করিয়া বনবাসী হইলাম ? তুমি কি রোহিণি, যে তোমার জন্য ভ্রমর,—জগতে অতুল, চিত্তায় মুখ, মুখে অতৃপ্তি, দুঃখে অমৃত, যে ভ্রমর— তাহা পরিত্যাগ করিলাম ? এই বলিয়া গোবিন্দলাল আর দুঃখ ক্রোধের বেগ সংবরণ করিতে না পারিয়া রোহিণীকে পদাঘাত করিলেন । , - রোহিণী বসিয়া পড়িল। কিছু বলিল না, কাদিতে লাগিল। কিন্তু চক্ষের জল গোবিন্দলাল দেখিতে পাইলেন না । গোবিন্দলাল বললেন, “রোহিণী, দাড়াও ” । রোহিণী দাড়াইল । গে। তুমি একবার মরিতে গিয়াছিলে। আবার মরিতে সাহস আছে কি ? রোহিণী তখন মরিবার ইচ্ছা করিতেছিল। অতি কাতর স্বরে বলিল, “এখন আর ন। মরিতে চাহিব কেন ? কপালে যা ছিল, তা হলো।” গো । তবে দাড়াও । নড়িও না । রোহিণী দাড়াইয়া রহিল । গোবিন্দলাল পিস্তলের বাক্স খুললেন, পিস্তল বাহির করিলেন। পিস্তল ভরা ছিল। ভরাই থাকিত । পিস্তল আনিয়া রোহিণীর সম্মুখে ধরিয়া গোবিন্দলাল বলিলেন, “কেমন, মরিতে পারিবে ?” f - রোহিণী ভাবিতে লাগিল। যে দিন অনায়াসে, অক্লেশে, বারুণীর জলে ডুবিয়া মরিতে গিয়াছিলু, আজি সে দিন রোহিণী ভুলিল। সে দুঃখ নাই, সুতরাং সে সাহসও নাই। ভাবিল, “মরিব কেন ? না হয় ইনি ত্যাগ করেন, করুন। ইহাকে কখমও ভুলিব না,কিন্তু তাই বলিয়া মরিব কেন? ইহাকে যে মনে ভাবিব, দুঃখের দশায় পড়িলে যে ইহাকে মনে করিব, এই প্রসাদপুরের মুখরাশি যে মনে করিব, সেও ত এক মুখ, সেও ত এক আশা। মরিব কেন ?" X\}