sw কৃষ্ণকাস্তের উইল রোহিণী বলিল, “মরিব না, মারও না। চরণে না রাখ, বিদায় দেও।” গো । দিই। এই বলিয়া গোবিন্দলাল পিস্তল উঠাইয়া রোহিণীর ললাটে লক্ষ্য করিলেন। রোহিণী কাদিয়া উঠিল। বলিল, “মারিও না ! মারিও না! আমার নবীন বয়স, নূতন মুখ। আমি আর তোমায় দেখা দিব না, আর তোমার পথে আসিব না। এখনই যাইতেছি । আমায় মারিও না !” - গোবিন্দলালের পিস্তলে খট্ করিয়া শব্দ হইল। তার পর বড় শব্দ, তার পর সব অন্ধকার! রোহিণী গতপ্রাণী হইয়া ভূপতিত হইল। গোবিন্দলাল পিস্তল ভূমে নিক্ষেপ করিয়া অতি দ্রুতবেগে গৃহ হইতে নির্গত হইলেন। পিস্তলের শব্দ শুনিয়া রূপা প্রভৃতি ভূত্যবর্গ দেখিতে আসিল । দেখিল, বালকনখরবিচ্ছিন্ন পদ্মিনীবৎ রোহিণীর মৃতদেহ ভূমে লুটাইতেছে। গোবিন্দলাল কোথাও নাই ! - দশম পরিচ্ছেদ দ্বিতীয় বৎসর o সেই রাত্রেই চৌকিদার থানায় গিয়া সংবাদ দিল যে, প্রসাদপুরের কুঠিতে খুন হইয়াছে। সৌভাগ্যবশতঃ থানা সে স্থান হইতে ছয় ক্রোশ ব্যবধান। দারগা আসিতে পরদিন বেলা প্রহরেক হইল। আসিয়া তিনি খুনের তদারকে প্রবৃত্ত হইলেন। রীতিমত সুরতহাল ও লাস তদারক করিয়া রিপোর্ট পাঠাইলেন। পরে রোহিণীর মৃতদেহ বান্ধিয়া ছ'দিয়া গোরুর গাড়ীতে বোঝাই দিয়া, চৌকিদারের সঙ্গে ডাক্তারখানায় পাঠাইলেন। পরে স্নান করিয়া আহারাদি করিলেন। তখন নিশ্চিন্ত হইয়। অপরাধীর অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন। কোথায় অপরাধী ? গোবিন্দলাল রোহিণীকে আহত করিয়াই গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছিলেন, আর প্রবেশ করেন নাই। এক রাত্রি এক দিন অবকাশ পাইয়। গোবিন্দলাল কোথায় কত দূর গিয়াছেন, তাহা কে বলিতে পারে ? কেহ তাহাকে দেখে নাই। কোন দিকে পলাইয়াছেন, কেহ জানে না। র্তাহার নাম পৰ্য্যন্ত কেহ জানিত না। গোবিন্দলাল প্রসাদপুরে কখনও নিজ নাম ধাম প্রকাশ করেন নাই ; সেখানে চুনিলাল দত্ত নাম প্রচার করিয়াছিলেন। কোন দেশ থেকে আসিয়াছিলেন, তাহা ভূত্যেরা পৰ্য্যন্তও জানিত না। দারগা কিছু দিন ধরিয়া একে ওকে ধরিয়া জোবানবন্দী করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। গোবিন্দলালের কোন
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।