So R কৃষ্ণকাম্ভের উইল w আসিল যে, গোবিন্দলাল বৈরাগীর বেশে শ্ৰীবৃন্দাবনে বাস করিতেছিল—সেইখান হইতে পুলিস ধরিয়া যশোহরে আনিয়াছে। যশোহরে তাহার বিচার হইবে। জনরবে এই সংবাদ ভ্রমর শুনিলেন। জনরবের সূত্র এই । গোবিন্দলাল, ভ্রমরের দেওয়ানজীকে পত্র লিখিয়াছিলেন যে, “আমি জেলে চলিলাম—আমার পৈতৃক বিষয় হইতে আমার রক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করা যদি তোমাদিগের অভিপ্রায়সম্মত হয়, তবে এই সময়। আমি তাহার যোগ্য নহি। আমার বাচিতে ইচ্ছা নাই। তবে ফাসি যাইতে না হয়, এই ভিক্ষা । জনরবে এ কথা বাড়ীতে জানাইও, আমি পত্র লিখিয়াছি, এ কথা প্রকাশ করিও না।” দেওয়ানজী পত্রের কথা প্রকাশ করিলেন না—জনরব বলিয়া অন্তঃপুরে সংবাদ পাঠাইলেন। ভ্রমর শুনিয়াই পিতাকে আনিতে লোক পাঠাইলেন । শুনিবামাত্র মাধবীনাথ কন্যার নিকট আসিলেন। ভ্রমর, তাহাকে নোটে কাগজে পঞ্চাশ হাজার টাকা বাহির করিয়া দিয়া সজলনয়নে বলিলেন, “বাবা, এখন যা করিতে হয় কর –দেখিও—আমি আত্মহত্যা না করি।” মাধবীনাথও কাদিতে কঁাদিতে বলিলেন, “মা ! নিশ্চিন্ত থাকিও—আমি আজই যশোহরে যাত্রা করিলাম। কোন চিন্তা করিও না । গোবিন্দলাল যে খুন করিয়াছেন, তাহার কোন প্রমাণ নাই । আমি প্রতিজ্ঞা করিয়া যাইতেছি যে, তোমার আটচল্লিশ হাজার টাকা বঁাচাইয়া আনিব—আর আমার জামাইকে দেশে আনিব ।” • মাধবীনাথ তখন যশোহরে যাত্রা করিলেন । শুনিলেন যে, প্রমাণের অবস্থা অতি ভয়ানক। ইনস্পেক্টর ফিচেল খী মোকদ্দমা তদারক করিয়া সাক্ষী চালান দিয়াছিলেন। তিনি রূপে সোণা প্রভৃতি যে সকল সাক্ষীরা প্রকৃত অবস্থা জানিত, তাহাদিগের কাহারও সন্ধান পান নাই। সোণা নিশাকরের কাছে ছিল--রূপা কোন, দেশে গিয়াছিল তাহ কেহ জানে না। প্রমাণের এইরূপ দুরবস্থা দেখিয়া নগদ কিছু দিয়া ফিচেল খণ তিনটি সাক্ষী তৈয়ার করিয়াছিল। সাক্ষীরা মাজিষ্ট্রেট সাহেবের কাছে বলিল যে, আমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছি যে গোবিন্দলাল ওরফে চুনিলাল স্বহস্তে পিস্তল মারিয়া রোহিণীকে খুন করিয়াছেন —আমরা তখন সেখানে গান শুনিতে গিয়াছিলাম। মাজিষ্ট্রেট সাহেব আহেলা বিলাতী—সুশাসন জন্য সৰ্ব্বদা গবর্ণমেণ্টের দ্বারা প্রশংসিত হইয়া থাকেন—তিনি এই প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া গোবিন্দলালকে সেশনের বিচারে অর্পণ করিলেন। যখন মাধবীনাথ যশোহরে পৌছিলেন, তখন গোবিন্দলাল জেলে পচিতেছিলেন। মাধবীনাথ পৌঁছিয়া, সবিশেষ বৃত্তান্ত শুনিয়া বিষন্ন হইলেন। তিনি সাক্ষীদিগের নাম ধাম সংগ্ৰহ করিয়া তাহাদিগের বাড়ী গেলেন। তাহাদিগকে
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।