পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় খণ্ড-পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ । XXX নহে—এ ভোগ, এ সুখ নহে—এ মন্দারঘর্ষণপীড়িত বাসুকিনিশ্বাসনির্গত হলাহল, এ ধন্বন্তরিভাণ্ডনিঃস্থত স্বধা নহে। বুঝিতে পারিলেন যে, এ হৃদয়সাগর, মম্বনের উপর মন্থন করিয় যে হলাহল তুলিয়াছি, তাহ অপরিহার্য্য, অবশু পান করিতে হুইবে—নীলকণ্ঠের ন্যায় গোবিন্দলাল সে বিষ পান করিলেন। নীলকণ্ঠের কণ্ঠস্থ বিষের মত, ষ্ট্রে বিষ তাহার কঃে লাগিয়া রহিল । সে বিষ জীর্ণ হইবার নহে—সে বিষ উদগীর্ণ করিবাঙ্গু নহে। কিন্তু তখন সেই পুৰ্ব্বপরিজ্ঞাতস্বাদ বিশুদ্ধ ভ্রমরপ্রণয়স্থধা—স্বৰ্গীয় গন্ধযুক্ত, চিত্তপুষ্টিকর, সৰ্ব্বরোগে ঔষধস্বরূপ, দিবারাত্রি স্মৃতিপথে জাগিতে লাগিল। যখন প্রসাদপুরে গোবিন্দলাল রোহিণী সঙ্গীতস্রোতে ভাসমান, তখনই ভ্রমর তাহার চিত্তে প্রবলপ্রতাপযুক্ত অধীশ্বরী—ত্ৰম অস্তরে, রোহিণী বাহিরে। তখন ভ্রমর অপ্রাপণীয়া, রোহিণী অভ্যাজ্য,—তবু ভ্রমর অস্তরে রোহিণী বাহিরে। তাই রোহিণী অত শীঘ্ৰ মরিল । যদি কেহ সে কথা না বুৰিয়া থাকেন তৰে বৃথায় এ আখ্যায়িকা লিখিলাম . . ੰ ੈ। যদি তখন গোবিন্দলাল, রোহিণীর যথাবিহিত ব্যবস্থা করিয়া স্নেহময়ী ভ্রমরের কা৷ে যুক্তকরে আসিয়া দাড়াইত, বলিত, “আমায় ক্ষমা কর— ভয়ায় আবার হৃদয়প্রাস্তে স্থা দাও।” যদি বলিত, “আমার এমন গুণ নাই, যাহাতে আমীয় তুমি ক্ষমা করিতে পার, কি তোমার ত অনেক গুণ আছে, তুমি নিজগুণে আমায় ক্ষম কর,” বুঝি তাহা হইলে, ভ্রম তাহাকে ক্ষমা করিত। কেন না, রমণী ক্ষমাময়ী, দয়াময়ী, স্নেহময়ী —রমণী ঈশ্বরেব কীৰ্ত্তি চরমোৎকর্ষ, দেবতার ছায়া ; পুরুষ দেবতার স্মৃষ্টি মাত্র। স্ত্রী আলোক ; পুরুষ ছায়া । আলে কি ছায়া ত্যাগ করিতে পারিত ? গোবিন্দলাল তাহ পারিল না। কতকটা অহঙ্কার—পুরুষ অহঙ্কারে পরিপূর্ণ কতকটা লজ্জা—দুষ্কৃতকারীর লজ্জাই দণ্ড। কতকটা ভয়—পাপ, সহজে পুণ্যের সম্মুখী হইতে পারে না। ভ্রমরের কাছে আর মুখ দেখাইবার পথ নাই। গোবিন্দলাল আর অগ্রস হইতে পারিল না। তাহার পর গোবিন্দলাল হত্যাকারী। তখন গোবিন্দলালের অাশ ভরসা ফুরাইল । অন্ধকার আলোকের সম্মুখীন হইল না । কিন্তু তবু, সেই পুনঃপ্রজ্বলিত, দুৰ্ব্বার, দাহকারী ভ্রমরদর্শনের লালস বর্ষে বর্ষে, মা:ে *মাসে, দিনে দিনে, দণ্ডে দণ্ডে, পলে পলে, গোবিন্দলালকে দাহ করিতে লাগিল। কে এম পাইয়াছিল ? কে এমন হারাইয়াছে ? ভ্রমরও দুঃখ পাইয়াছিল, গোবিন্দলালও ছঃ পাইয়াছিল। কিন্তু গোবিন্দলালের তুলনায় ভ্রমর মুখী। গোবিন্দলালের হুঃখ মনুষ্মদে৷ে অসহ্য — ভ্রমরের সহায় ছিল—যম সহায় । গোবিন্দলালের সে সহায়ও নাই । .. '