প্রথম খণ্ড-তৃতীয় পরিচ্ছেদ 強。6 হরলাল চলিয়া গেলে ব্ৰহ্মানন্দের বিষম ভয়সঞ্চার হইল । তিনি দেখিলেন যে, তিনি যে কাৰ্য্যে স্বীকৃত হইয়াছেন, তাহ রাজদ্ধারে মহা দণ্ডাহঁ অপরাধ—কি জানি, ভবিষ্যতে পাছে র্তাহাকে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ হইতে হয়। আবার বদলের সময়ে যদি কেহ ধরিয়৷ ফেলে ? তবে তিনি এ কার্য্য কেন করেন ? না করিলে হস্তগত সহস্র মুদ্র ত্যাগ করিতে হয়। তাহাও হয় না। প্রাণ থাকিতে নয় । - হায়! ফলাহার! কত দরিদ্র ব্রাহ্মণকে তুমি মৰ্ম্মাত্তিক পীড়া দিয়াছ। এ দিকে সংক্রামক জ্বর, প্লীহায় উদর পরিপূর্ণ, তাহার উপর ফলাহার উপস্থিত ! তখন কাংস্তপাত্র বা কদলীপত্রে সুশোভিত লুচি, সন্দেশ, মিহিদান, সীতাভোগ প্রভৃতির অমলধবল শোভা, সন্দর্শন করিয়া দরিদ্র ব্রাহ্মণ কি করিবে ? ত্যাগ করিবে, না আহার করিবে ? আমি শপথ করিয়া বলিতে পারি যে, ব্রাহ্মণ ঠাকুর যদি সহস্ৰ বৎসর সেই সজ্জিত পাত্রের নিকট বসিয়া তর্ক বিতর্ক করেন, তথাপি তিনি এ কূট প্রশ্নের মীমাংসা করিতে পারিবেন না–এবং মীমাংসা করিতে না পারিয়া—অন্যমনে পরস্ত্রব্যগুলি উদরসাৎ করিবেন। ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষ মহাশয়ের ঠিক তাই হইল। হরলালের এ টাকা হজম করা ভার— । জেলখানার ভয় আছে ; কিন্তু ত্যাগ করাও যায় না। লোভ বড়, কিন্তু বদহজমের ভয়ও বড়। ব্ৰহ্মানন্দ মীমাংসা করিতে পারিল না। মীমাংসা করিতে না পারিয়া দরিদ্র ব্রাহ্মণের মত উদরসাং করিবার দিকেই মন রাখিল । . - তৃতীয় পরিচ্ছেদ । সন্ধ্যার পর ব্রহ্মানন্দ উইল লিখিয়া ফিরিয়া আসিলেন। দেখিলেন যে, হরলাল আসিয়া বসিয়া আছেন। হরলাল জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইল ?” ব্ৰহ্মানন্দ একটু কবিতাপ্রিয়। তিনি কষ্টে হাসিয়া বলিলেন, “মনে করি চাপ ধরি হাতে দিই পেড়ে । । বাবল গাছে হাত লেগে আঙ্গুল গেল ছিড়ে ।” হর। পার নাই নাকি ? - - • ব্র । ভাই, কেমন বাধ বাধ ঠেকিতে লাগিল। ছ। পার নাই ? - ত্র। না ভাই—এই ভাই, তোমার জাল উইল নাও। এই তোমার টাকা নাও। : o
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।