পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

。邯 。 কৃষ্ণকাস্তের উইল এই বলিয়া ব্ৰহ্মানন্দ কৃত্রিম উইল ও বাক্স হইতে পাঁচ শত টাকার নোট বাহির করিয়া দিলেন। ক্রোধে এবং বিরক্তিতে হরলালের চক্ষু আরক্ত এবং অধর কম্পিত হইল। বলিলেন, *যুখ অকৰ্ম্মা ! স্ত্রীলোকের কাজটাও তোমা হইতে হইল না ? আমি চলিলাম। কিন্তু দেখিও, যদি তোমা হইতে এই কথার বাষ্প মাত্র প্রকাশ পায়, তবে তোমার জীবন সংশয় ।” जवानल বলিলেন, “সে ভাবনা করিও না ; কথা আমার নিকট প্রকাশ পাইবে না ।” সেখান হইতে উঠিয়া হরলাল ব্রহ্মানন্দের পাকশালায় গেলেন। হরলাল ঘরের ছেলে, সৰ্ব্বত্র গমনাগমন করিতে পারেন। পাকশালায় ব্রহ্মানন্দের ভ্রাতৃকন্যা রোহিণী রাধিতেছিল। এই রোহিণীতে আমার বিশেষ কিছু প্রয়োজন আছে। অতএব তাহার রূপ গুণ কিছু বলিতে হয়, কিন্তু আজি কালি রূপ বর্ণনার বাজার নরম—আর গুণ বর্ণনার-হাল আইনে আপনার ভিন্ন পরের করিতে নাই। তবে ইহা বলিলে হয় যে, রোহিণীর যৌবন পরিপূর্ণ— রূপ উছলিয়া পড়িতেছিল--শরতের চন্দ্র ষোল কলায় পরিপূর্ণ। সে অল্প বয়সে বিধবা হইয়াছিল, কিন্তু বৈধব্যের অনুপযোগী অনেকগুলি দোষ তাহার ছিল। দোষ, সে কালা পেড়ে ধুতি পরিত, হাতে চুড়ি পরিত, পানও বুঝি খাইত। এ দিকে রন্ধনে সে দ্রৌপদীবিশেষ বলিলে হয় ; ঝোল, অম্ল, চড়চড়ি, সড়সড়ি, ঘণ্ট, দালনা ইত্যাদিতে সিদ্ধহস্ত ; আবার আলেপন, খয়েরের গহনা, ফুলের খেলনা, সূচের কাজে তুলনারহিত । চুল বাধিতে, কন্যা সাজাইতে, পাড়ার একমাত্র অবলম্বন। তাহার আর কেহ সহায় ছিল না বলিয়া সে ব্ৰহ্মানন্দের বাটীতে থাকিত । রোহিণী রূপসী ঠন্‌ ঠন্‌ করিয়া দালের হাড়িতে কাটি দিতেছিল, দূরে একটা বিড়াল যাব পাতিয়া বসিয়া ছিল ; পশুজাতি রমণীদিগের বিছান্দাম কটাক্ষে শিহরে কি না, দেখিবার দন্ত রোহিণী তাহার উপরে মধ্যে মধ্যে বিষপূর্ণ মধুর কটাক্ষ করিতেছিল ; বিড়াল সে মধুর কটাক্ষকে ভর্জিত মৎস্যাহারের নিমন্ত্রণ মনে করিয়া অল্পে অল্পে অগ্রসর হইতেছিল, এমত ময়ে হরলাল বাবু জুতা সমেত মস মস করিয়া ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলেন। বিড়াল, hত হইয়া, ভঙ্গিত মৎস্যের লোভ পরিত্যাগপূর্বক পলায়নে তৎপর হইল ; রোহিণী দালের গটি কেলিয়া দিয়া, হাত ধুইয়া, মাথায় কাপড় দিয়া উঠিয় দাড়াইল। নখে নখ খুটিয়া দুঙ্গাসা করিল, “বড় কাক, কবে এলেন ?” হরলাল বলিল, “কাল এসেছি। তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে।” রোহিণী শিহরিল ; বলিল, “আজি এখানে খাবেন ? সরু চালের ভাত চড়াব কি ?” হর। চড়াও, চড়াও । কিন্তু সে কথা নয় डाभाव এক দিনের কথা মনে পড়ে কি ?