ঘোরান্ধকার। কিছু পরে হঠাৎ যেন চাবি খোলার শব্দ অল্প কাণে গেল-এ কি জেলের ' ' চাবি পড়িল ? হঠাৎ একটু চমক হইল। কৃষ্ণকান্ত সটক হাতড়াইলেন, পাইলেন ন— । অভ্যাসবশতঃ ডাকিলেন, “হরি!” . o কৃষ্ণকান্ত অন্তঃপুরে শয়ন করিতেন না—বহিৰ্ব্বাটতেও শয়ন করিতেন না। উভয়ের মধ্যে একটি ঘর ছিল। সেই ঘরে শয়ন করিতেন। সেখানে হরি নামক এক জল খানসামা তাহার প্রহরী স্বরূপ শয়ন করিত। আর কেহ না । কৃষ্ণকান্ত তাহাকেই ডাকিলেন, “হরি ” - কৃষ্ণকান্ত বারেক মাত্র হরিকে ডাকিয়া, আবার আফিমে ভোর হইয়া ঝিমাইতে লাগিলেন। আসল উইল, র্তাহার গৃহ হইতে সেই অবসরে অন্তৰ্হিত হইল। জাল উইল তৎপরিবর্তে স্থাপিত হইল। পঞ্চম পরিচ্ছেদ পরদিন প্রাতে রোহিণী আবার রাধিতে বসিয়াছে, আবার সেখানে হরলাল উকি মারিতেছে। ভাগ্যশঃ ব্ৰহ্মানন্দ বাড়ী ছিল না—নহিলে কি একটা মনে করিতে পারিত। হরলাল ধীরে ধীরে রোহিণীর কাছে গেল—রোহিণী বড় চাহিয়া দেখে না। হরলাল বলিল, “চাহিয়া দেখ—হঁাড়ি ফাটিবে না।” রোহিণী চাহিয়া দেখিয়া হাসিল । হরলাল বলিল, “কি করিয়াছ ?” রোহিণী অপহৃত উইল আনিয়া হরলালকে দেখিতে দিল । হরলাল পড়িয়া দেখিল- আসল উইল বটে। তখন সে তুষ্টের মুখে হাসি ধরে না। উইল হাতে করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি প্রকারে আনিলে ?” রোহিণী সে গল্প আরম্ভ করিল। প্রকৃত কিছুই বলিল না। একটি মিথ্যা উপন্যাস বলিতে লাগিল—বলিতে বলিতে সে হরলালের হাত হইতে উইলখানি লইয়া দেখাইল, কি প্রকারে কাগজখানা একটা কলমদানের ভিতর পড়িয়া ছিল। উইল চুরির কথা শেষ হইলে রোহিণী হঠাৎ উইলখানা হাতে করিয়া উঠিয়া গেল। যখন সে ফিরিয়া আসিল, তখন । তাহার হাতে উইল নাই দেখিয়া হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “উইল কোথায় রাখিয়া আসিলে ?” রোহি। তুলিয়া রাখিয়া আসিয়াছি। হর। আর তুলিয়া রাখিয়া কি হইবে ? আমি এখনই যাইব । রোহি। এখনই যাবে ? এত তাড়াতাড়ি কেন ?
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।