পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ তুমি, বসন্তের কোকিল। প্রাণ ভরিয়া ডাক, তাহাতে আমার কিছুমাত্র আপত্তি নাই, কিন্তু তোমার প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ যে, সময় বুঝিয়া ডাকিবে। সময়ে, অসময়ে, সকল সময়ে ডাকাডাকি ভাল নহে। দেখ, আমি বহু সন্ধানে, লেখনী মসীপাত্র ইত্যাদির সাক্ষাৎ পাইয়া, আরও অধিক অনুসন্ধানের পর মনের সাক্ষাৎ পাইয়া, কৃষ্ণকাস্তের উইলের কথা ফাদিয়া লিখিতে বসিতেছিলাম, এমন সময়ে তুমি আকাশ হইতে ডাকিলে “কুহু কুহু ! কুহু ” তুমি সুকণ্ঠ, আমি স্বীকার করি, কিন্তু মুকণ্ঠ বলিয়া কাহারও পিছু ডাকিবার অধিকার নাই। যাই হউক, আমার পলিত কেশ, চলিত কলম, এ সব স্থানে তোমার ডাকাডাকিতে বড় আসে যায় না। কিন্তু দেখ, যখন নব্য বাবু টাকার জালায় ব্যতিব্যস্ত হইয়া জমাখরচ লইয়া মাথা কুটাকুটি করিতেছেন, তখন তুমি হয়ত আপিসের ভগ্ন প্রাচীরের কাছ হইতে ডাকিলে, “কুহু”—বাবুর আর জমাখরচ মিলিল না। যখন বিরহসন্তপ্ত । সুন্দর, প্রায় সমস্ত দিনের পর অর্থাৎ বেলা নয়টার সময় ছুটি ভাত মুখে দিতে বসিয়াছেন, কেবল ক্ষীরের বাটিটি কোলে টানিয়া লইয়াছেন মাত্র, অমনি তুমি ডাকিলে—“কুহু”— সুন্দরীর ক্ষীরের বাটি অমনি রহিল—হয়ত, তাহাতে অন্তমনে লুণ মাখিয়া খাইলেন । যাহ। হউক, তোমার কুহুরবে কিছু যাহূ আছে, নহিলে যখন তুমি বকুল গাছে বসিয়া ডাকিতেছিলে—আর বিধবরোহিণী কলসীকক্ষে জল আনিতে যাইতেছিল—তখন—কিন্তু আগে জল আনিতে যাওয়ার পরিচয়টা দিই । তা, কথাটা এই । ব্রহ্মানন্দ ঘোষ দুঃখী লোক—দাসী চাকরাণীর বড় ধার ধারে না। সেটা সুবিধা, কি কুবিধা, তা বলিতে পারি না—সুবিধা হউক, কুবিধা হউক, যাহার চাকরাণী নাই, তাহার ঘরে ঠকামি, মিথ্যা সংবাদ, কোন্দল, এবং ময়লা, এই চারিটি বস্তু নাই। চাকরাণী নামে দেবতঃ এই চারিটির স্বষ্টিকৰ্ত্তা। বিশেষ যাহার অনেকগুলি চাকরাণী, তাহার বাড়ীতে নিত্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ-নিত্য রাবণবধ । কোন চাকরাণী ভীমরূপিণী, সৰ্ব্বদাই সম্মার্জনীগদ হস্তে গৃহরণক্ষেত্রে ফিরিতেছেন ; কেহ তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজা ফুৰ্য্যোধন, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণতুল্য বীরগণকে ভৎসনা করিতেছেন ; কেহ কুম্ভকৰ্ণরূপিণী ছয় মাস করিয়া নিদ্রা যাইতেছেন ; নিদ্রান্তে সৰ্ব্বস্ব খাইতেছেন ; কেহ মুগ্রীব, গ্রীষ্ম । হেলাইয়া কুম্ভকর্ণের বধের উদ্যোগ করিতেছেন। ইত্যাদি। ,