প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ సి রোহিণী ঘাটে বসিয়া কাদিতেছে—তাহার কলসী তখনও জলে ভাসিতেছে। তখন গোবিন্দলাল উষ্ঠান হইতে গৃহাভিমুখে চলিলেন । যাইবার সময়ে দেখিতে পাইলেন যে, তখনও রোহিণী ঘাটে বসিয়া আছে। . এতক্ষণ অবলা এক বসিয়া কাদিতেছে দেখিয়া, তাহার একটু দুঃখ উপস্থিত হইল। তখন তাহার মনে হইল যে, এ স্ত্রীলোক সচ্চরিত্রা হউক, শচরিত্রা হউক, এও সেই জগংপিতার প্রেরিত সংসারপতঙ্গ—আমিও সেই তাহার প্রেরিত সংসারপতঙ্গ ; অতএব এও আমার ভগিনী। যদি ইহার হুঃখ নিবারণ করিতে পারি—তবে কেন করিব না? . গোবিন্দলাল ধীরে ধীরে সোপানাবলী অবতরণ করিয়া রোহিণীর কাছে গিয়া, তাহার পার্শ্বে চম্পকনিৰ্ম্মিত মূৰ্ত্তিবৎ সেই চম্পকবর্ণ চন্দ্রকিরণে দাড়াইলেন। রোহিণী দেখিয়া চমকিয়া উঠিল। গোবিন্দলাল বলিলেন, “রোহিণি ! তুমি এতক্ষণ এক বসিয়া কাদিতেছ কেন ?” রোহিণী উঠিয় দাড়াইল, কিন্তু কথা কহিল না। গোবিন্দলাল পুনরপি বলিলেন, “তোমার কিসের দুঃখ, আমায় কি বলিবে না ? যদি আমি কোন উপকার করিতে পারি।” যে রোহিণী হরলালের সম্মুখে মুখরার হায় কথোপকথন করিয়াছিল—গোবিন্দলালের সম্মুখে সে রোহিণী একটি কথাও কহিতে পারিল না। কিছু বলিল না—গঠিত পুত্তলীর মত সেই সরোবরসোপানের শোভা বদ্ধিত করিতে লাগিল। গোবিন্দলাল স্বচ্ছ সরোবরজলে সেই ভাস্করকীৰ্ত্তিকল্প মূৰ্ত্তির ছায়া দেখিলেন, পূর্ণচন্দ্রের ছায়া দেখিলেন এবং কুমুমিত কাঞ্চনাদি বৃক্ষের ছায়া দেখিলেন। সব সুন্দর-কেবল নির্দয়ত অসুন্দর । স্থষ্টি করুণাময়ী —মনুষ্য অকরুণ। গোবিন্দলাল প্রকৃতির স্পষ্টাক্ষর পড়িলেন। রোহিণীকে আবার বলিলেন, “তোমার যদি কোন বিষয়ে কষ্ট থাকে, তবে আজি হউক, কালি হউক, আমাকে জানাইও। নিজে না বলিতে পার, তবে আমাদের বাড়ীর স্ত্রীলোকদিগের দ্বারায় জানাইও।” রোহিণী এবার কথা কহিল। বলিল, “এক দিন বলিব । আজ নহে। এক দিন তোমাকে আমার কথা শুনিতে হইবে।” গোবিন্দলাল স্বীকৃত হইয়া, গৃহাভিমুখে গেলেন। রোহিণী জলে ঝাপ দিয়া কলসী ধরিয়, তাহাতে জল পুরিল-কলসী তখন বক্—বক্ৰ-গল-গল-করিয়া বিস্তর আপত্তি করিল। আমি জানি, শূন্ত কলসীতে জল পুরিতে গেলে কলসী, কি মৃৎকলসী, কি মন্থন্তকলসী, এইরূপ আপত্তি করিয়া থাকে-বড় গণ্ডগোল করে। পরে অন্তঃশূন্ত কলসী, পূর্ণতোয় • *
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।