পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড-ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ❖ጻ নাদমুরে গমকে গমকে তানমূর্ছনাদি সহিত নানাবিধ রাগরাগিণীর আলাপ করিতেছে—আর এক দিকে, তাহার মন, অহিফেনপ্রসাদাৎ ত্রিভুবনগামী অশ্বে আরূঢ় হইয়া নানা স্থান পৰ্য্যটন , করিতেছে । রোহিণীর চাদপান মুখখানা বুড়ারও মনের ভিতর ঢুকিয়াছিল বোধ হয়,—চাদ কোথায় উদয় না হয় ?—নহিলে বুড়া আফিঙ্গের ঝোকে ইন্দ্রাণীর স্কন্ধে সে মুখ বসাইবে কেন ? কৃষ্ণকান্ত দেখিতেছেন যে, রোহিণী হঠাৎ ইন্দ্রের শচী হইয়া, মহাদেবের গোহাল হইতে ষাড় চুরি করিতে গিয়াছে। নন্দ ত্রিশূল হস্তে যাড়ের জাব দিতে গিয়া তাহাকে ধরিয়াছে। দেখিতেছেন, নন্দ রোহিণীর আলুলায়িত কুন্তলদাম ধরিয়া টানাটানি লাগাইয়াছে, এবং ষড়াননের ময়ূর, সন্ধান পাইয়া, তাহার সেই আগুলফ-বিলম্বিত কুঞ্চিত কেশগুচ্ছকে : ক্ষতফণা ফণিশ্রেণী ভ্ৰমে গিলিতে গিয়াছে—এমত সময়ে স্বয়ং বড়ানন ময়ূরের দৌরাস্থ্য o দেখিয়া নালিশ করিবার জন্য মহাদেবের কাছে উপস্থিত হইয়াভাকিতেছেন,"জ্যেষ্ঠ মহাশয় ।" । কৃষ্ণকান্ত বিস্মিত হইয়া ভাবিতেছেন, “কাৰ্ত্তিক মহাদেবকে কি সম্পর্কে জেঠ মহাশয় বলিয়া ডাকিতেছেন ?” এমত সময় কাৰ্ত্তিক আবার ডাকিলেন, “জ্যেঠা মহাশয়।” কৃষ্ণকান্ত বড় বিরক্ত হইয়া, কাৰ্ত্তিকের কাণ মলিয়া দিবার অভিপ্রায়ে হস্ত উত্তোলন করিলেন । আমনি কৃষ্ণকাম্ভের হস্তস্থিত আলবোলার নল হাত হইতে খসিয়া ঝনাৎ করিয়া পানের বাটার উপর পড়িয়া গেল, পানের বাট ঝন ঝন ঝনাৎ করিয়া পিকদানির উপর পড়িয়া গেল ; এবং নল, বাট, পিকদানি, সকলেই একত্রে সহগমন করিয়া ভূতলশায়ী হইল। সেই শব্দে কৃষ্ণকান্তের নিদ্রাভঙ্গ হইল, তিনি নয়নোন্মীলন করিয়া দেখেন যে, কাৰ্ত্তিকেয় যথার্থই উপস্থিত। মূৰ্ত্তিমান স্কন্দবীরের স্থায়, গোবিন্দলাল র্তাহার সম্মুখে দাড়াইয়া আছেন— ডাকিতেছেন, “জ্যেঠা মহাশয়।” কৃষ্ণকান্ত শশব্যস্তে উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি বাবা গোবিন্দলাল ?” গোবিন্দলালকে বুড় বড় ভালব.সিত । - - গোবিন্দলালও কিছু অপ্রতিভ হইলেন —বলিলেন, “আপনি নিদ্রা যান—আমি এমন কিছু কাজে আসি নাই।” এই বলিয়া, গোবিন্দলাল পিকদানিটি উঠাইয়। সোজা করিয়া রাখিয়া, পানবাটা উঠাইয়া যথাস্থানে রাখিয়া, নলটি কৃষ্ণকাস্তের হাতে দিলেন। কিন্তু কৃষ্ণকান্ত শক্ত বুড়া—সহজে ভুলে না--মনে মনে বলিতে লাগিলেন, “কিছু না, এ ছুচে আবার সেই চাদমুখে মাগীর কথা বলিতে আসিয়াছে।” প্রকাশ্বে বলিলেন, “না। আমার ঘুম হইয়াছে—আর ঘুমাইব না।” গোবিন্দলাল একটু গোলে পড়িলেন। রোহিণীর কথা কৃষ্ণকান্তের কাছে বলিতে প্রাতে র্তাহার কোন লজ্জা করে নাই—এখন একটু লজ্জা করিতে লাগিল—কথা বলি বলি