প্রথম খণ্ড-চতুর্দশ পরিচ্ছেদ כלי হরিদ্রাগ্রাম আমার স্বর্গ, এখানে গোবিন্দলালের মন্দির। এই হরিদ্রাগ্রামই আমার শ্মশান, এখানে আমি পুড়িয়া মরিব । শ্মশানে মরিতে পায় না, এমন কপালও আছে । আমি যদি এ হরিদ্রাগ্রাম ছাড়িয়া না যাই, ত আমার কে কি করিতে পারে? কৃষ্ণকান্ত রায় আমার মাথা মুড়াইয়া, ঘোল ঢালিয়া দেশছাড়া করিয়া দিবে ? আমি আবার আসিব। গোবিন্দ্রলাল রাগ করিবে ? করে করুক,—তবু আমি তাহাকে দেখিব। আমার চক্ষু ত কাড়িয়া লইতে পরিবে না। আমি যাব না। কলিকাতায় যাব না—কোথাও যাব না। যাই ত যমের বাড়ী যাব । আর কোথাও না ।” ” এই সিদ্ধান্ত স্থির করিয়া, কালামুখী রোহিণী উঠিয়া দ্বার খুলিয়া আবার— “পতঙ্গবন্ধহ্নিমুখং বিবিক্ষুঃ”—সেই গোবিন্দলালের কাছে চলিল। মনে মনে বলিতে বলিতে চলিল,—“হে জগদীশ্বর, হে দীননাথ, হে দুঃখিজনের একমাত্র সহায়! আমি নিতান্তু দুঃখিনী, নিতান্ত স্থঃখে পড়িয়াছি—আমায় রক্ষা কর—আমার হৃদয়ের এই অসহ প্রেমবহ্নি নিবাইয়া দাও—আর আমায় পোড়াইও না। আমি যাহাকে দেখিতে যাইতেছি—তাহাকে যত বার দেখিব, তত বার—আমার অসহ যন্ত্রণা—অনন্ত মুখ । আমি বিধব। —আমার ধৰ্ম্ম গেল মুখ গেল— প্রাণ গেল—রহিল কি প্রভু !—রাখিব কি প্ৰভু !—হে দেবতা। হে তুর্গা–হে কালি--হে জগন্নাথ—আমায় সুমতি দাও—আমার প্রাণ স্থির কর—আমি এই যন্ত্রণা আর সহিতে পারি না।” তবু সেই স্ফীত, হৃত, অপরিমিত প্রেমপরিপূর্ণ হৃদয়—থামিল না। কখনও ভাবিল, গরল খাই ; কখনও ভাবিল, গোবিন্দলালের পদপ্রান্তে পড়িয়া, অন্তঃকরণ যুক্ত করিয়া সকল কথা বলি ; কখনও ভাবিল, পলাইয়া যাই ; কখনও ভাবিল, বারুণীতে ডুবে মরি ; কখনও ভাবিল. ধৰ্ম্মে জলাঞ্জলি দিয়া গোবিন্দলালকে কাড়িয়া লইয়া দেশান্তরে পলাইয়া যাই । রোহিণী কাদিতে কাদিতে গোবিন্দলালের কাছে পুনর্বার উপস্থিত হইল। গোবিন্দলাল জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন ? কলিকাতায় যাওয়া স্থির হইল ত ?” রো । না । গো । সে কি ? এইমাত্র আমার কাছে স্বীকার করিয়াছিলে ? রো। যাইতে পারিব না। গো । বলিতে পারি না। জোর করিবার আমার কোনই অধিকার নাই—কিন্তু গেলে ভাল হইত। রে। কিসে ভাল হইত ?
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।