পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা [ সম্পাদকীয় ] বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস ও গল্পগুলিকে কোনও কোনও সমালোচক তিনটি বিভিন্ন স্তরে ভাগ করিয়াছেন ; প্রথম স্তরে ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘কপালকুগুলা ও মৃণালিনী ; তৃতীয় স্তরে, ‘আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী ও সীতারাম ; বাকী সবগুলি গল্প ও উপন্যাস দ্বিতীয় স্তরের অন্তর্গত। এই স্তরের প্রথম উপন্যাস বিষবৃক্ষ ও শেষ উপন্যাস 'কৃষ্ণকান্তের উইল । अँदछ কৃষ্ণকান্তের উইলে’র পরেও দ্বিতীয় স্তরে তাহার “ক্ষুদ্র কথা” রাজসিংহ প্রকাশিত হয়। প্রথম সংস্করণের রাজসিংহ’কে উপন্যাসের পর্য্যায়ে ফেলা যায় না। ১৮৮২ খ্ৰীষ্টাব্দে প্রকাশিত ৮৩ পৃষ্ঠার এই চটি গল্পের বইটি ১৮৯৩ খ্ৰীষ্টাব্দে চতুর্থ সংস্করণে বর্তমান রূপ (৪৩৪ পৃষ্ঠা ) গ্রহণ করে। বস্তুতঃ অধুনাপ্রচলিত রাজসিংহকে নানা কারণে তৃতীয় স্তরের অন্তভূক্ত করা সঙ্গত । দ্বিতীয় স্তরের প্রথম উপন্যাস ‘বিষবৃক্ষ’ ( ১৮৭৩) ও ‘কৃষ্ণকাম্ভের উইলে’র (১৮৭৮) প্রকৃতিগত সাদৃশ্ব খুব ঘনিষ্ঠ। শেষোক্ত উপন্যাসে শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্রের লেখনী সৰ্ব্বাপেক্ষা পরিণতি লাভ করিয়াছে। অনেকের মতে নিছক রসরচনা-হিসাবে এইটিই তাহার শেষ ও শ্রেষ্ঠ বই। কোনও কোনও সমসাময়িক লেখক এমনও সাক্ষ্য দিয়াছেন যে, বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং 'কৃষ্ণকান্তের উইল’কে তাহার শ্রেষ্ঠ রচনা মনে করিতেন। রস বিচার আমাদের ভূমিকার উদ্দেশ্য নহে, আমরা ভূমিকায় পুস্তক সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য তথ্যগুলি মাত্রই লিপিবদ্ধ করিবার চেষ্টা করিব। কিষ্ণকাম্ভের উইল’ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাতব্য তথ্য এই যে, বঙ্কিমচন্দ্রের জীবিতকালে এবং তাহার মৃত্যুর পর পুস্তক পুস্তিক এবং সাময়িকপত্রে ইহা লইয়। এত অধিক আলোচনা হইয়াছে যে, সেগুলি সংগ্ৰহ করিয়া প্রকাশ করিলে বিরাট একটি গ্রন্থ হইতে পারে। রোহিণীর অপঘাত-মৃত্যু লইয়া বঙ্কিমচন্দ্রকে বহু বার জবাবদিহি করিতে হইয়াছে। উত্যক্ত হইয়া তিনি শেষ পর্য্যন্ত বঙ্গদর্শনে’ লিখিয়াছিলেন :– ...অনেক পাঠক আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন—“রোহিণীকে মারিলেন কেন ?” অনেক সময়েই উত্তর করিতে বাধ্য হইয়াছি, “আমার ঘাট হইয়াছে।” কাব্যগ্রন্থ, মনুষ্যজীবনের • কঠিন সমস্ত সকলের ব্যাখ্যা মাত্র, এ কথা যিনি না বুঝিয়া, এ কথা বিশ্বত হইয়া কেবল গল্পের অনুরোধে উপন্যাস পাঠে নিযুক্ত হয়েন, তিনি এ সকল উপন্যাস পাঠ না করিলেই বাধ্য হই। —“বঙ্গদর্শন, মাঘ ১২৮৪, পৃ. ৪৬৬।