বায়ুকোষ স্ফীত হয়, সেই সময়ে রোগীর মুখে ফুৎকার দিতে হয়। পরে উত্তোলিত বাহুদ্বয়, । ধীরে ধীরে নামাইতে হয় নামাইলে বায়ুকোষ সঙ্কুচিত হয় ; তখন সেই ফুৎকার-প্রেরিত - বায়ু আপনিই নির্গত হইয়া আইসে। ইহাতে কৃত্রিম নিশ্বাস প্রশ্বাস বাহিত হয়। এইরূপ । পুনঃ পুনঃ করিতে করিতে বায়ুকোষের কার্য্য স্বতঃ পুনরাগত হইতে থাকে ; কৃত্রিম নিশ্বাস প্রশ্বাস বাহিত করাইতে করাইতে সহজ নিশ্বাস প্রশ্বাস আপনি উপস্থিত হয়। রোহিণীকে তাই করিতে হইবে। তুই হাতে দুইটি বাহু তুলিয়া ধরিয়া তাহার মুখে ফুৎকার দিতে হইবে, তাহার সেই পক্কবিশ্ববিনিন্দিত, এখনও মৃধাপরিপূর্ণ, মদনমদোন্মাদহলাহলকলসী তুলা রাঙ্গা রাঙ্গ মধুর অধরে অধর দিয়া ফুৎকার দিতে হইবে ! কি সৰ্ব্বনাশ! কে দিবে ? গোবিন্দলালের এক সহায়, উড়িয়া মালী। বাগানের অন্য চাকরের ইতিপূর্বেই গৃহে গিয়াছিল । তিনি মালীকে বলিলেন, “আমি ইহার হাত তুইটি তুলে ধরি, তুই ইহার মুখে ফু দে দেখি !” - মুখে ফু ! সৰ্ব্বনাশ ! ঐ রাঙ্গা রাঙ্গ সুধামাখা অধরে, মালীর মুখের ফু—“সেহৈ পারিব না মুনিম৷ ” মালীকে মুনিব যদি শালগ্রামশিল চৰ্ব্বন করিতে বলিত, মালী মুনিবের খাতিরে করিলে করিতে পারিত, কিন্তু সেই চাদমুখের রাঙ্গা অধরে—সেই কটুকি মুখের ফু ! মালী ঘামিতে আরম্ভ করিল। স্পস্ট বলিল, “মু সে পারিবি না অবধড়।” - মালী ঠিক বলিয়াছিল। মালী সেই দেবদুল্লভ ওষ্ঠাথরে যদি একবার মুখ দিয়া ফু দিত, তারপর যদি রোহিণী বাচিয়া উঠিয়া আবার সেই ঠোট ফুলাইয়া কলসীকক্ষে জল লইয়া, মালীর পানে চাহিয়া, ঘরে যাইত—তবে আর তাহাকে ফুলবাগানের কাজ করিতে হইত না। সে খোস্তা, খুপে, নিড়িন, কাচি, কোদালি, বারুণীর জলে ফেলিয়া দিয়া, এক দৌড়ে ভদরক পানে ছুটিত সন্দেহ নাই—বোধ হয় সুবর্ণরেখার নীল জলে ডুবিয়া মরিত। মালী অত ভাবিয়াছিল কি না বলিতে পারি না, কিন্তু মালী ফু দিতে রাজি হইল না। অগত্যা গোবিন্দলাল তাহাকে বলিলেন, “তবে তুই এইরূপ ইহার হাত দুইটি ধীরে ধীরে উঠাইতে থাকৃ—আমি ফু দিই। তাহার পর ধীরে ধীরে হাত নামাইবি।” মালী তাহা স্বীকাৰু করিল। সে হাত দুইটি ধরিয়া ধীরে ধীরে উঠাইল—গোবিন্দলাল তখন সেই ফুল্লরক্তকুসুমকান্তি অধরযুগলে ফুল্লরক্তকুসুমকান্তি অধরযুগল স্থাপিত করিয়া—রোহিণীর - মুখে ফুৎকার দিলেন। , , ।
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।