প্রথম খণ্ড—একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ - &S ঠেলা মারিয়া ফেলিয়া দিল, তাহার চুল ধরিয়া টানিল। শেষে আপনি কাদিতে লাগিল । ক্ষীরোদা, মধ্যে মধ্যে ভ্রমরের কাছে চড়ট চাপড়টা খাইত, কখনও রাগ করিত না ; কিন্তু আজি কিছু বাড়াবাড়ি, আজ একটু রাগিল। বলিল, “তা ঠাকুরুণ, আমাদের মারিলে ধরিলে কি হইবে—তোমারই জন্ত আমরা বলি। তোমাদের কথা লইয়া লোকে একটা হৈ হৈ করে, আমরা তা সষ্টতে পারি না। তা আমার কথা বিশ্বাস না হয়, তুমি পাচিকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা কর।” l - ভ্রমর, ক্রোধে দুঃখে কাদিতে কুঁদিতে বলিতে লাগিল, “তোর'জিজ্ঞাসা করিতে হয় তুই করগে—আমি কি তোদের মত ছুচে পাজি যে, আমার স্বামীর কথা পাচি । চাড়ালনীকে জিজ্ঞাসা করিতে যাইব । তুই এত বড় কথা আমাকে বলিস। ঠাকুরানীকে । বলিয়া আমি বাটা মেরে তোকে দূর করিয়া দিব। তুই আমার সম্মুখ হইতে দূর হইয়া যা ।” তখন সকাল বেল উত্তম মধ্যম ভোজন করিয়া ক্ষীরোদ ওরফে কীরি চাকরাণী রাগে । গর গর করিতে করিতে চলিয়া গেল। এ দিকে ভ্রমর উৰ্দ্ধমুখে সজলনয়নে, যুক্তকরে, মনে মনে গোবিন্দলালকে ডাকিয়া বলিতে লাগিল, “হে গুরো । শিক্ষক, ধৰ্ম্মজ্ঞ, আমার একমাত্র সত্যস্বরূপ! তুমি কি সে দিন এই কথা আমার কাছে গোপন করিয়াছিলে!” তার মনের ভিতর যে মন, হৃদয়ের যে লুক্কায়িত স্থান কেহ কখনও দেখিতে পায় না— যেখানে আত্মপ্রতারণা নাই, সেখান পর্য্যন্ত ভ্রমর দেখিলে স্বামীর প্রতি অবিশ্বাস নাই । অবিশ্বাস হয় না। ভ্রমর কেবল একবার মাত্র মনে ভাবি লন যে, “তিনি অবিশ্বাসী হইলেই বা এমন দুঃখ কি ? আমি মরিলেই সব ফুরাইবে।” হিন্দুর মেয়ে, মরা বড় সহজ মনে করে। একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ এখন ক্ষৗরি চাকরাণী মনে কলিল যে, এ বড় কলিকাল—এক রত্তি মেয়েটা, আমার কথায় বিশ্বাস করে না। ক্ষীরোদার সরল অন্তকরণে ভ্রমরের উপর রাগ দ্বেষাদি কিছুই নাই, সে ভ্রমরের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষিণী বটে, তাহার অমঙ্গল চাহে না ; তবে ভ্রমর যে তাহার ঠকামি কাণে তুলিল না, সেটা অসহ। ক্ষীরোদ তখন, মুচিক্কণ দেহযষ্টি সংক্ষেপে তৈলনিষিক্ত করিয়া, রঙ্গকরা গামছাখানি কুঁাধে ফেলিয়া, কলসীকক্ষে, বারুণীর ঘাটে স্নান । করিতে চলিল ।
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।