পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

५२ ।। কৃষ্ণকাস্তের উইল হরমণি ঠাকুরাণী, বাবুদের বাড়ীর এক জন পাচিক, সেই সময় বারুশীর ঘাট হইতে স্নান করিয়া আসিতেছিল, প্রথমে তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। হরমণিকে দেখিয়া ক্ষীরোদ আপন আপনি বলিতে লাগিল, “বলে, যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর-আর বড়লোকের কাজ করা হল না—কখন কার মেজাজ কেমন থাকে, তার ঠিকানাই নাই।" হরমণি, একটু কোন্দলের গন্ধ পাইয়া, দাহিন হাতের কাচা কাপড়খানি বা হাতে রাখিয়া, জিজ্ঞাসা করিল, “কি লে৷ ক্ষীরোদা—আবার কি হয়েছে ?” ক্ষীরোদ তখন মনের বোঝা নামাইল। বলিল, “দেখ দেখি গা--পাড়ার কালামুখীর বাবুর বাগানে বেড়াইতে যাবে-তা আমরা চাকর বাকর—আমরা কি তা মুনিবের কাছে বলিতে পারি না ।” হর। সে কি লো ? পাড়ার মেয়ে আবার বাবুর বাগান বেড়াইতে কে গেল ! ক্ষী। আর কে যায় ? সেই কালামুখী রোহিণী। হর। কি পোড়া কপাল! রোহিণীর আবার এমন দশা কত দিন ? কোন বাবুর বাগানে রে ক্ষীরোদ ! ক্ষীরোদা মেজ বাবুর নাম করিল। তখন দুই জনে একটু চাওয়াটাওয়ি করিয়া, একটু রসের হাসি হাসিয়া, যে যে দিকে যাইবার, সে সেই দিকে গেল। কিছু দূর গিয়াই ক্ষীরোদার সঙ্গে পাড়ার রামের মার দেখা হইল। ক্ষীরোদ তাহাকেও হাসির ফঁাদে ধরিয়া ফেলিয়া, দাড় করাইয়া রোহিণীর দৌরাত্মোর কথার পরিচয় দিল। আবার জনে হাসি চাহনি ফেরাফিরি করিয়া অভীষ্ট পথে গেল। এইৰূপে ক্ষীরোদা, পথে রামের মা, শ্বামের মা, হারী, তারী, পারী যাহার দেখা পাইল, তাহারই কাছে আপন মৰ্ম্মপীড়ার পরিচয় দিয়া, পরিশেষে মুস্থশরীরে প্রফুল্লহৃদয়ে বারুণীর ক্ষাটিক বারিরাশিমধ্যে অবগাহন করিল। এ দিকে হরমণি, রামের মা,খ্যামের মা, হারী, তারী, পারী যাহাকে যেখানে দেখিল, তাহাকে সেইখানে ধরিয়া শুনাইয়া দিল যে রোহিণী হতভাগিনী মেজ বাবুর বাগান বেড়াইতে গিয়াছিল। একে শূন্ত দশ হইল, ਜਾਂ শূন্ত শত হইল, শতে শূন্ত সহস্ৰ হইল। যে সূর্য্যের নবীন কিরণ তেজস্ব না হইতে হইতেই, কারি প্রথম ভ্রমরের সাক্ষাতে রোহিণীর কথা পাড়িয়ছিল, তাহার অন্তগমনের পূৰ্ব্বেই গৃহে গুহে ঘোষিত হইল যে, বােল্লিী গোবিন্দলালের অনুগৃহীত। কেবল বাগানের কথা হইতে অপরিমেয় প্রণয়ের কথামপরিময় প্রণয়ের কথা হইতে অপরিমেয় অলঙ্কারের কথা,আর কত কথা উঠিল, তাহা আমি-হে রটনাকৌশলময়ী কলঙ্ককলিতকণ্ঠ কুলকামিনীগণ! তাহা আমি