ত্রয়োবিংশতিতম পরিচ্ছেদ সে রাত্রি প্রভাত না হইতেই ভ্রমর স্বামীকে পত্র লিখিতে বসিল । লেখাপড় গোবিন্দলাল শিখাইয়াছিলেন, কিন্তু ভ্রমর লেখাপড়ায় তত মজবুত হইয় উঠে নাই । ফুলটি পুতুলটি পাখীটি স্বামীটিতে ভ্রমরের মন, লেখাপড়া বা গৃহকৰ্ম্মে তত নহে। কাগজ লইয় লিখিতে বসিলে, একবার মুছিত একবার কাটিত, একবার কাগজ বদলাইয়া আবার মুছিত, আবার কাটিত । শেষ ফেলিয়া রাখিত। দুই তিন দিনে একখানা পত্র শেষ হইত না, কিন্তু আজ সে সকল কিছু হইল না। তেড়া বঁকা ছাদে, যাহা লেখনীর অগ্ৰে বাহির হইল, আজ তাহাই ভ্রমরের মঞ্জুর। “ম”গুলা “স’র মত হইল—“স”গুলা "ম”র মত হইল— “খ”গুলা “ফ’র মত, “ফ’গুলা “থ”র মত, “থ”গুলা “খ”র মত, ইকারের স্থানে আকার— আকারের একেবারে লোপ, যুক্ত অক্ষরের স্থানে পৃথক পৃথক্ অক্ষর, কোন কোন অক্ষরের লোপ,—শ্ৰমর কিছু মানিল না। ভ্রমর আজি এক ঘণ্টার মধ্যে এক দীর্ঘ পত্র স্বামীকে লিখিয়া ফেলিল। কাটাকুটি যে ছিল না, এমত নহে। আমরা পত্রখনির কিছু পরিচয় দিতেছি। ভ্রমর লিখিতেছে— "সেবিকা ঐ ভোমরা" (তার পর ভোমরা কাটিয়া ভ্রমর করিল) "দাস" ( আগে দাম্ম, তাহা কাটিয়া দাস্য-তাহ কাটিয়া দাস্তো—দাস্যা: ঘটয় উঠে নাই) “প্রণামা:" "প্র" লিখিতে প্রথমে “স্ত্ৰ”, তার পর "শ্র", শেষে "প্ৰ") “নিবেদনঞ্চ” (প্রথমে নিবেদঞ্চ, তার পর নিবেদনঞ্চ) "বিশেস” (বিশেষ হইয় উঠে নাই)। এইরূপ পত্র লেখার প্রণালী। যাহা লিখিয়াছিল, তাহার বর্ণগুলি শুদ্ধ করিয়া, ভাষা একটুকু সংশোধন করিয়া নিম্নে লিখিতেছি । * "সে দিন রাত্রে বাগানে কেন তোমার দেরি হইয়াছিল, তাহ আমাকে ভাঙ্গিয় বলিলে না। দুই বৎসর পরে বলিবে বলিয়াছিলে, কিন্তু আমি কপালের দোষে আগেই তাছা শুনিলাম। শুনিয়াছি কেন, দেখিয়াছি। তুমি রোহিণীকে যে বস্ত্রীলঙ্কার দিয়াছ, তাহ সে স্বয়ং আমাকে দেখাইয়া গিয়াছে। তুমি মনে জান বোধ হয় যে, তোমার প্রতি আমার ভক্তি অচলা—তোমার উপর আমার বিশ্বাস অনন্ত। আমিও তাহা জানিতাম । কিন্তু এখন বুঝিলাম যে, তাহী নহে। যত দিন তুমি ভক্তির যোগ্য, তত দিন আমারও ভক্তি যত দিন ভূমি বিশ্বাসী, তত দিন আমারও
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।