প্রথম খণ্ড-পঞ্চবিংশতিতম পরিচ্ছেদ (tషా চারি দিনের দিন গোবিন্দলাল আসিয়া পৌছিলেন। শুনিলেন যে, ভ্রমর পিত্রালয়ে গিয়াছে, আজি তাহাকে আনিতে পান্ধী যাইবে । গোবিন্দলাল সকলই বুঝিতে পারিলেন। মনে মনে বড় অভিমান হইল। মনে মনে ভাবিলেন, “এত অবিশ্বাস! না বুধিয়া, না জিজ্ঞাসা । করিয়া আমাকে ত্যাগ করিয়া গেল ! আমি আর সে ভ্রমরের মুখ দেখিব না। যাহার ভ্রমর নাই, সে কি প্রাণধারণ করিতে পারে না ?” এই ভাবিয়া গোবিন্দলাল, ভ্রমরকে আনিবার জন্য লোক পাঠাইতে মাতাকে নিষেধ করিলেন। কেন নিষেধ করিলেন, তাহ কিছুই প্রকাশ করিলেন না। র্তাহার সম্মতি পাইয়া, কৃষ্ণকান্ত বধু আনিবার জন্য আর কোন উদ্যোগ করিলেন না। পঞ্চবিংশতিতম পরিচ্ছেদ এইরূপে দুই চারি দিন গেল। ভ্রমরকে কেহ আনিল না, ভ্রমরও আসিল না। গোবিন্দলাল মনে করিলেন, ভ্রমরের বড় স্পৰ্দ্ধা হইয়াছে, তাহাকে একটু কাদাইব । মনে করিলেন, ভ্রমর বড় অবিচার করিয়াছে, একটু কাদাইব। এক একবার শূন্ত-গৃহ দেখিয়া আপনি একটু কাদিলেন। ভ্রমরের অবিশ্বাস মনে করিয়া এক একবার একটু কাদিলেন। ভ্রমরের সঙ্গে কলহ, এ কথা ভাবিয়া কান্না আসিল । আবার চোখের জল মুছিয়া, রাগ করিলেন। রাগ করিয়া ভ্রমরকে ভুলিবার চেষ্টা করিলেন। ভুলিবার সাধ্য কি ? মুখ যায়, স্মৃতি যায় না। ক্ষত ভাল হয়, দাগ ভাল হয় না। মানুষ যায়, নাম থাকে। শেষ দুৰ্ব্বদ্ধি গোবিন্দলাল মনে করিলেন, ভ্রমরকে ভুলিবার উৎকৃষ্ট উপায়, রোহিণীর চিন্তা। রোহিণীর অলৌকিক রূপপ্রভ, একদিনও গোবিন্দলালের হৃদয় পরিত্যাগ করে নাই। গোবিন্দলাল জোর করিয়া তাহাকে স্থান দিতেন না, কিন্তু সে ছাড়িত না। উপন্যাসে শুনা যায়, কোন গৃহে ভূতের দৌরাত্ম্য হইয়াছে, ভূত দিবারাত্রি উকি ঝুকি মারে, কিন্তু ওঝা তাহাকে তাড়াইয়া দেয়। রোহিণী প্রেতিনী তেমনি দিবারাত্র গোবিন্দলালের হৃদয়মন্দিরে উকি ঝুকি মারে, গোবিন্দলাল তাহাকে তাড়াইয়া দেয়। যেমন জলতলে চন্দ্রসূর্যের ছায়া আছে, চন্দ্র সূৰ্য্য নাই, তেমনি গোবিন্দলালের হৃদয়ে অহরহ: রোহিণীর ছায়া আছে, রোহিণী নাই। গোবিন্দলাল ভাবিলেন, যদি ভ্রমরকে আপাততঃ ভুলিতে হইবে, তবে রোহিণীর কথাই ভাবি-নহিলে এ হুঃখ ভুল যায় না। অনেক কুচিকিৎসক ক্ষুদ্র রোগের উপশম জন্য উৎকট বিষের প্রয়োগ করেন। গোবিন্দলালও ক্ষুদ্র রোগের উপশম জন্য উৎকট
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।