\ყyo " কৃষ্ণকাস্তের উইল বিষের প্রয়োগে প্রবৃত্ত হইলেন। গোবিন্দলাল আপন ইচ্ছায় আপনি আপন অনিষ্টসাধনে প্রবৃত্ত হইলেন। - রোহিণীর কথা প্রথমে স্মৃতিমাত্র ছিল, পরে দুঃখে পরিণত হইল। দুঃখ হইতে বাসনায় পরিণত হইল। গোবিন্দলাল বারুণীতটে, পুষ্পবৃক্ষপরিবেষ্টিত মণ্ডপমধ্যে উপবেশন করিয়া সেই বাসনার জন্য অনুতাপ করিতেছিলেন। বর্ষাকাল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাদল হইয়াছে— বৃষ্টি কখনও কখনও জোরে আসিতেছে-কখনও মৃদু হইতেছে। কিন্তু বৃষ্টি ছাড়া নাই। সন্ধ্য। উত্তীর্ণ হয়। প্রায়াগত যামিনীর অন্ধকার, তাহার উপর বাদলের অন্ধকার, বারুণীর ঘাট স্পষ্ট দেখা যায় না। গোবিন্দলাল অস্পষ্টরূপে দেখিলেন যে, এক জন স্ত্রীলোক নামিতেছে। রোহিণীর সেই সোপানাবতরণ গোবিন্দলালের মনে হইল বাদলে ঘাট বড় পিছল হইয়াছে—পাছে পিছলে পা পিছলাইয়া স্ত্রীলোকটি জলে পড়িয়া গিয়া বিপদগ্ৰস্ত হয়, ভাবিয়া, গোবিন্দলাল কিছু ব্যস্ত হইলেন । পুষ্পমণ্ডপ হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “কে গ তুমি, আজ ঘাটে নামিও না—বড় পিছল, পড়িয়া যাইবে।” স্ত্রীলোকটি র্তাহার কথা স্পষ্ট বুঝিতে পারিয়াছিল কি না বলিতে পারি না। বৃষ্টি পড়িতেছিল—বোধ হয় বৃষ্টির শব্দে সে ভাল করিয়া শুনিতে পায় নাই। সে কুক্ষিস্থ কলসী ঘাটে নামাইল। সোপান পুনরারোহণ করিল। ধীরে ধীরে গোবিন্দলালের পুষ্পোছান অভিমুখে চলিল। উছানদ্বার উদঘাটিত করিয়া উদ্যানমধ্যে প্রবেশ করিল। গোবিন্দলালের কাছে, মণ্ডপতলে গিয়া দাড়াইল। গোবিন্দলাল দেখিলেন, সম্মুখে রোহিণী । গোবিন্দলাল বলিলেন, “ভিজিতে ভিজিতে এখানে কেন রোহিণি ?” রো। আপনি কি আমাকে ডাকিলেন ? গে। ডাকি নাই। ঘাটে বড় পিছল, নামিতে বারণ করিতেছিলাম। দাড়াইয়। ভিজিতেছ কেন ? , রোহিণী সাহস পাইয়া মণ্ডপমধ্যে উঠিল। গোবিন্দলাল বলিলেন, “লোকে দেখিলে কি বলিবে ?” রে। যা বলিবার তা বলিতেছে। সে কথা আপনার কাছে একদিন বলিব বলিয়া অনেক যত্ন করিতেছি । - গো । আমারও সে সম্বন্ধে কতকগুলি কথা জিজ্ঞাসা করিবার আছে। কে এ কথা রটাইল ? তোমরা ভ্রমরের দোষ দাও কেন ? রো। সকল বলিতেছি। কিন্তু এখানে দাড়াইয়া বলিব কি ?
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।