প্রথম খণ্ড—ষড় বিংশ পরিচ্ছেদ や> গো । না। আমার সঙ্গে আইস । এই বলিয়া গোবিন্দলাল, রোহিণীকে ডাকিয়া বাগানের বৈঠকখানায় লইয়া গেলেন । সেখানে উভয়ে যে কথোপকথন হইল, তাহার পরিচয় দিতে আমাদিগের প্রবৃত্তি হয় না। কেবল এই মাত্র বলিব যে, সে রাত্রে রোহিণী, গৃহে যাইবার পূৰ্ব্বে বিয়া গেলেন যে, গোবিন্দলাল রোহিণীর রূপে মুগ্ধ। ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ রূপে মুগ্ধ? কে কার নয় ? আমি এই হরিত নীল চিত্রিত প্রজ্ঞ তিটির রূপে মুগ্ধ। তুমি কুসুমিত কামিনী-শাখার রূপে মুগ্ধ। তাতে দোষ কি ? রূপত মোষ্ট্রের জন্যই হইয়াছিল । গোবিন্দলাল প্রথমে এইরূপ ভাবিলেন। পাপের প্রথম সোপানে পদার্পণ করিয়া, পুণ্যাত্মাও এইরূপ ভাবে। কিন্তু যেমন বাহ জগতে মাধ্যাকর্ষণে, তেমনি অন্তর্জগতে পাপের আকর্ষণে প্রতি পদে পতনশীলের গতি বৰ্দ্ধিত হয়। গোবিন্দলালের অধঃপতন বড় দ্রুত হইল —কেন না, রূপতৃষ্ণ অনেক দিন হইতে র্তাহার হৃদয় শুষ্ক করিয়া তুলিয়াছে। আমরা কেবল কঁদিতে পারি, অধঃপতন বর্ণনা করিতে পারি না। ক্রমে কৃষ্ণকান্তের কাণে রোহিণী ও গোবিন্দলালের নাম একত্রিত হইয়া উঠিল। কৃষ্ণকান্ত দুঃখিত হইলেন। গোবিন্দলালের চরিত্রে কিছুমাত্র কলঙ্ক ঘটিলে তাহার বড় কষ্ট। মনে মনে ইচ্ছা হইল, গোবিন্দলালকে কিছু তন্তু যোগ করিবেন। কিন্তু সম্প্রতি কিছু পীড়িত হইয়া পড়িয়াছিলেন। শয়নমন্দির ত্যাগ করতে পারিতেন না। সেখানে গোবিন্দলাল র্তাহাকে প্রত্যহ দেখিতে আসিত, কিন্তু সৰ্ব্বদা তিনি সেবকগণপরিবেষ্টিত থাকিতেন, গোবিন্দলালকে সকলের সাক্ষাতে কিছু বলিতে পারিতেন না। কিন্তু পীড় বড় বৃদ্ধি পাইল। হঠাৎ কৃষ্ণকান্তের মনে হইল যে, বুঝি চিত্রগুপ্তের হিসাব নিকাশ হইয়া আসিল —এ জীবনের সাগরসঙ্গম বুঝি সম্মুখে। আর বিলম্ব করিলে কথা বুঝি বলা হইবে না। এক দিন গোবিন্দলাল অনেক রাত্রে বাগান হইতে প্রত্যাগমন করিলেন। সেই দিন কৃষ্ণকান্ত মনের কথা বলিবেন মনে করিলেন। গোবিন্দলাল দেখিতে আসিলেন। কৃষ্ণকান্ত পার্শ্ববৰ্ত্তিগণকে উঠিয়া যাইতে বলিলেন। পাশ্ববর্তিগণ সকলে উঠিয়া গেল। তখন গোবিন্দলাল কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি আজ কেমন আছেন ?” কৃষ্ণকান্ত ক্ষীণস্বরে বলিলেন, “আজি বড় ভাল নই। তোমার এত রাত্রি হইল কেন ?” গোবিন্দলাল সে কথার কোন উত্তর না দিয়া, কৃষ্ণকাস্তের প্রকোষ্ঠ হস্তমধ্যে লইয়া
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।