৬২ কৃষ্ণকাস্তের উইল নাড়ী টিপিয়৷ দেখিলেন। অকস্মাৎ গোবিন্দলালের মুখ শুকাইয়া গেল। কৃষ্ণকান্তের জীবনপ্রবাহ অতি ধীরে ধীরে ধীরে বহিতেছে। গোবিন্দলাল কেবল বলিলেন, “আমি আসিতেছি।” কৃষ্ণকাস্তের শয়নগুহ হইতে নির্গত হইয়া গোবিন্দলাল একেবারে স্বয়ং বৈদ্যের গৃহে গিয়া উপস্থিত হইলেন। বৈদ্য বিস্মিত হইল । গোবিন্দলাল বলিলেন, “মহাশয়, শীঘ্র ঔষধ লইয়া আসুন, জ্যেষ্ঠতাতের অবস্থা বড় ভাল বোধ হইতেছে না।” বৈষ্ঠ শশবাস্তে একরাশি বটিকা লইয়া তাহার সঙ্গে ছুটলেন —কৃষ্ণকান্তের গৃহে গোবিন্দলাল বৈদ্যসহিত উপস্থিত হইলেন, কৃষ্ণকান্ত কিছু ভীত হইলেন। কবিরাজ হাত দেখিলেন। কৃষ্ণকান্ত জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন, কিছু শঙ্কা হইতেছে কি ?” বৈদ্য বলিলেন, “মনুষ্যশরীরে শঙ্কা কখন নাই ?” কৃষ্ণকান্ত বুঝিলেন, বলিলেন, “কতক্ষণ মিয়াদ ?” বৈদ্য বলিলেন, “ঔষধ খাওয়াইয়া পশ্চাৎ বলিতে পারিব।” বৈদ্য ঔষধ মাড়িয়া সেবন জন্য কৃষ্ণকান্তের নিকট উপস্থিত করিলেন । কৃষ্ণকান্ত ঔষধের খল হাতে লইয়া একবার মাথায় স্পর্শ করাইলেন । তাহার পর ঔষধটুকু সমুদায় পিকদানিতে নিক্ষিপ্ত করিলেন । বৈদ্য বিষঃ হইল। কৃষ্ণকান্ত দেখিয়া বলিলেন, “বিষণ্ণ হইবেন না। ঔষধ খাইয়া বাচিবার বয়স আমার নহে । ঔষধের অপেক্ষ হরিনামে আমার উপকার । তোমরা হরিনাম কর, আমি শুনি।” কৃষ্ণকান্ত ভিন্ন কেহই হরিনাম করিল না, কিন্তু সকলেই স্তম্ভিত, ভীত, বিস্মিত হইল। কৃষ্ণকান্ত একাই ভয়শূন্ত । কৃষ্ণকান্ত গোবিন্দলালকে বলিলেন, “আমার শিওরে দেরাজের চাবি আছে, বাহির কর।” গোবিন্দলাল বালিসের নীচে হইতে চাবি লইলেন। কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “দেরাজ খুলিয়া আমার উইল বাহির কর ।” গোবিন্দলাল দেরাজ খুলিয় উইল বাহির করিলেন। কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “আমার আমলা মুহুরি ও দশ জন গ্রামস্থ ভদ্রলোক ডাকাও।” তখনই নাএব মুহুরি গোমস্ত কারকুনে, চট্টোপাধ্যায় মুখোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায় ভট্টাচার্ষ্যে, ঘোষ বস্তু মিত্র দত্তে ঘর পুরিয়া গেল। কৃষ্ণকান্ত এক জন মুহুরিকে আজ্ঞা করিলেন, “আমার উইল পড়।” মুহুরি পড়িয়া সমাপ্ত করিল। কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “ও উইল ছিড়িয়া ফেলিতে হইবে। নূতন উইল লেখ ।”
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।