কৃষ্ণকাস্তের উইল واولم কিনিয়া, উপস্থিত পত্রে বিদায় লইতে গিয়াছে । চাল মহাৰ্থ হইল, কেন না, কেবল অন্নব্যয় নয়, এত ময়দা খরচ যে, আর চালের গুড়িতে কুলান যায় না; এত ঘুতের খরচ যে, রোগীরা আর কাষ্টর অয়েল পায় না ; গোয়ালার কাছে ঘোল কিনিতে গেলে তাহার। বলিতে আরম্ভ করিল, আমার ঘোলটুকু ব্রাহ্মণের আশীৰ্ব্বাদে দই হইয়া গিয়াছে। কোনমতে শ্রাদ্ধের গোল থামিল, শেষ উইল পড়ার যন্ত্রণ আরম্ভ হইল। উইল পড়িয়া হরলাল দেখিলেন, উইলে বিস্তর সাক্ষী—কোন গোল করিবার সম্ভাবনা নাই। হরলাল শ্রাদ্ধান্তে স্বস্থানে গমন করিলেন । উইল পড়িয়া আসিয়া গোবিন্দলাল ভ্রমরকে বলিলেন, “উইলের কথা শুনিয়াছ ?” ভ্র। কি ? গো । তোমার অৰ্দ্ধাংশ । ভ্র । আমার, না তোমার ? গো । এখন আমার তোমার একটু প্রভেদ হইয়াছে। আমার নয়, তোমার। ভ্র । তাহ হইলেই তোমার। গো । তোমার বিষয় আমি ভোগ করিব না। ভ্রমরের বড়ই কান্না আসিল, কিন্তু ভ্রমর অহঙ্কারের বশীভূত হইয়া রোদন সংবরণ করিয়া বলিল, “তবে কি করিবে ?” ". . গো। যাহাতে দুই পয়সা উপার্জন করিয়া দিনপাত করিতে পারি, তাহাই করিব । ভ্র । সে কি ? গো । দেশে দেশে ভ্রমণ করিয়া চাকরির চেষ্টা করিব । ভ্র। বিষয় আমার জ্যেষ্ঠ শ্বশুরের নহে, আমার শ্বশুরের। তুমিই র্তাহার উত্তরাধিকারী, আমি নহি। জ্যেঠার উইল করিবার কোন শক্তিই ছিল না। উইল অসিদ্ধ। আমার পিতা শ্রাদ্ধের সময়ে নিমন্ত্রণে আসিয়া এই কথা বুঝাইয়া দিয়া গিয়াছেন। বিষয় তোমার, আমার নহে । গে। আমার জ্যেষ্ঠতাত মিথ্যাবাদী ছিলেন না। ৰিষয় তোমার, আমার নহে। তিনি যখন তোমাকে লিখিয়া দিয়া গিয়াছেন, তখন বিষয় তোমার, আমার নহে। ভ্র। যদি সেই সন্দেহই থাকে, আমি না হয় তোমাকে লিখিয়া দিতেছি । গো । তোমার দান গ্রহণ করিয়া জীবনধারণ করিতে হইবে ? ভ্র। তাহাতেই বা ক্ষতি কি ? আমি তোমার দাসানুদাস বই ত নই ?
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।