পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড—অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ . ७१ গো । আজি কালি ও কথা সাজে না, ভ্রমর ! ভ্র। কি করিয়াছি ? আমি তোমা ভিন্ন এ জগৎসংসারে আর কিছু জানি না। আট বৎসরের সময়ে আমার বিবাহ হইয়াছে—আমি সতের বৎসরে পড়িয়াছি। আমি এ নয় বৎসর আর কিছু জানি না, কেবল তোমাকে জানি । আমি তোমার প্রতিপালিত, তোমার খেলিবার পুত্ত ল—আমার কি অপরাধ হইল ? গো । মনে করিয়া দেখ । ভ্র । অসময়ে পিত্রালয়ে গিয়াছিলাম—ঘাট হইয়াছে, আমার শত-সহস্র অপরাধ হইয়াছে—আমায় ক্ষমা কর। আমি আর কিছু জানি না, কেবল তোমায় জানি, তাই রাগ করিয়াছিলাম । গোবিন্দলাল কথা কহিল না। তাহার অগ্রে, আলুলায়িতকুন্তলা, অশ্রুবিপ্লুত, বিবশ, কাতরা, মুগ্ধ, পদপ্রান্তে বিলুষ্ঠিত সেই সপ্তদশবর্ষীয়া বনিতা। গোবিন্দলাল কথা কহিল না। গোবিন্দলাল তখন ভাবিতেছিল, “এ কালো! রোহিণী কত সুন্দরী। এর গুণ আছে, তার রূপ আছে। এত কাল গুণের সেবা করিয়াছি, এখন কিছু দিন রূপের । সেবা করিব।—আমার এ অসার, এ আশাশূন্ত, প্রয়োজনশূন্ত জীবন ইচ্ছামত কাটাইব। মাটির ভাণ্ড যে দিন ইচ্ছা সেই দিন ভাঙ্গিয় ফেলিব।” - . ভ্রমর পায়ে ধরিয়া কাদিতেছে—ক্ষমা কর । আমি বালিকা ! যিনি অনন্ত সুখদুঃখের বিধাতা, অন্তর্যামী, কাতরের বন্ধু, অবশুই তিনি এ কথাগুলি শুনিলেন, কিন্তু গোবিন্দলাল তাহ শুনিল না । নীরব হইয়া রহিল। গোবিন্দলাল ৰোহিণীকে ভাবিতেছিল। তীব্রজ্যোতিৰ্ম্ময়ী, অনন্তপ্রভাশালিনী প্রভাতশুক্রতারারূপিণী রূপতরঙ্গিণী চঞ্চলা রোহিণীকে ভাবিতেছিল। ভ্রমর উত্তর না পাইয়া বলিল, “কি বল ?” গোবিন্দলাল বলিল, “আমি তোমায় পরিত্যাগ করিব।” ভ্রমর পদত্যাগ করিল। উঠিল। বাহিরে যাইতেছিল। চৌকাঠ বাধিয়া পড়িয়া মূচ্ছিত হইল। -