পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ “কি অপরাধ আমি করিয়াছি যে আমাকে ত্যাগ করিবে ?” এ কথা ভ্রমর গোবিন্দলালকে মুখে বলিতে পারিল না—কিন্তু এই ঘটনার পর পলে - পলে, মনে মনে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, আমার কি অপরাধ ? গোবিন্দলালও মনে মনে অনুসন্ধান করিতে লাগিল যে, ভ্রমরের কি অপরাধ ? ভ্রমরের যে বিশেষ গুরুতর অপরাধ হইয়াছে, তাহা গোবিন্দলালের মনে এক প্রকার স্থির হইয়াছে। কিন্তু অপরাধটা কি, তাহা তত ভাবিয়া দেখেন নাই । ভাবিয়া দেখিতে গেলে মনে হইত, ভ্রমর যে র্তাহার প্রতি অবিশ্বাস করিয়াছিল, অবিশ্বাস করিয়া তাহাকে এত কঠিন পত্র লিখিয়াছিল—একবার তাহাকে মুখে সত্য মিথ্যা জিজ্ঞাসা করিল না, এই তাহার অপরাধ। যার জন্য এত করি, সে এত সহজে আমাকে অবিশ্বাস করিয়াছে, এই তাহার অপরাধ। আমরা কুমতি সুমতির কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি। গোবিন্দলালের হৃদয়ে পাশাপাশি উপবেশন করিয়া, কুমতি সুমতি যে কথোপকথন করিতেছিল, তাহা সকলকে শুনাইব । কুমতি বলিল, “ভ্রমরের প্রথম এইটি অপরাধ, এই অবিশ্বাস ” সুমতি উত্তর করিল, “যে অবিশ্বাসের যোগ্য, তাহাকে অবিশ্বাস না করিবে কেন ? তুমি রোহিণীর সঙ্গে এই আনন্দ উপভোগ করিতেছ, ভ্রমর সেইটা সন্দেহ করিয়াছিল বলিয়াই কি তার এত দোষ?” কুমতি। এখন যেন আমি অবিশ্বাসী হইয়াছি, কিন্তু যখন ভ্রমর অবিশ্বাস করিয়াছিল, তখন আমি নির্দোষী। । সুমতি । ছদিন আগে পাছেতে বড় আসিয়া যায় না—দোষ ত করিয়াছ। যে দোষ করিতে সক্ষম, তাহাকে দোষী মনে করা কি এত গুরুতর অপরাধ ? - কুমতি। ভ্রমর আমাকে দোষী মনে করিয়াছে বলিয়াই আমি দোষী হইয়াছি। সাধুকে চোর বলিতে বলিতে চোর হয়। মুমতি। দোযটা যে চোর বলে তার। যে চুরি করে তার কিছু নয়! কুমতি। তোর সঙ্গে বকড়ায় আমি পারব না। দেখ না, ভ্রমর আমার কেমন অপমানটা করিল ? আমি বিদেশ থেকে আসছি শুনে বাপের বাড়ী চলিয়া গেল ?