*. কৃষ্ণকাস্তের উইল কুমতি । সেই চেষ্টায় আছি। সুমতি । রোহিণী—সঙ্গে যাবে কি ? তখন কুমতিতে সুমতিতে ভারি চুলোচুলি ঘুষোঘুষি আরম্ভ হইল। ত্রিংশ পরিচ্ছেদ আমার এমন বিশ্বাস আছে যে, গোবিন্দলালের মাত যদি পাকা গৃহিণী হইতেন, তবে ফুৎকার মাত্রে এ কাল মেঘ উড়িয়া যাইত। তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, বধূর সঙ্গে তাহার পুত্রের আন্তরিক বিচ্ছেদ হইয়াছে। স্ত্রীলোক ইহা সহজেই বুঝিতে পারে। যদি তিনি এই সময়ে সন্থপদেশে, স্নেহবাক্যে এবং স্ত্রীবুদ্ধিমুলভ অন্যান্ত সঞ্চুপায়ে তাহার প্রতীকার করিতে যত্ন করিতেন, তাহ হইলে বুঝি সুফল ফলাইতে পারিতেন । কিন্তু গোবিন্দলালের মাতা বড় পাকা গৃহিণী নহেন, বিশেষ পুত্রবধু বিষয়ের অধিকারিণী হইয়াছে বলিয়া ভ্রমরের উপরে একটু বিদ্বেষাপন্নাও হইয়াছিলেন। যে স্নেহের বলে তিনি ভ্রমরের ইষ্টকামনা করিবেন, ভ্রমরের উপর র্তাহার সে স্নেহ ছিল না। পুত্র থাকিতে, পুত্রবধূত্র বিষয় হইল, ইহা তাহার অসহ হইল। তিনি একবারও অনুভব করিতে পারিলেন না যে, ভ্রমর গোবিন্দলাল অভিন্নসম্পত্তি জানিয়া, গোবিন্দলালের চরিত্রদোষসম্ভাবনা দেখিয়া, কৃষ্ণকান্ত রায় গোবিন্দলালের শাসন জন্য ভ্রমরকে বিষয় দিয়া গিয়াছিলেন। একবারও তিনি মনে ভাবিলেন না যে, কৃষ্ণকান্ত মুমুধু অবস্থায় কতকটা লুপ্তবুদ্ধি হইয়া, কতকটা ভ্রান্তচিত্ত হইয়াই এ অবিধেয় কাৰ্য্য করিয়াছিলেন। তিনি ভাবিলেন যে, পুত্রবধুর সংসারে র্তাহাকে কেবল গ্রাসাচ্ছাদনের অধিকারিণী, এবং অন্নদাস পৌরবর্গের মধ্যে গণ্য হইয়া ইহজীবন নিৰ্ব্বাহ করিতে হইবে । অতএব সংসার ত্যাগ করাই ভাল, স্থির করিলেন । একে পতিহীন, কিছু আত্মপরায়ণ, তিনি স্বামিবিয়োগকাল হইতেই কাশীযাত্রা কামনা করিতেন, কেবল স্ত্রীস্বভাবসুলভ পুত্রস্নেহবশতঃ এত দিন যাইতে পারেন নাই। এক্ষণে সে বাসনা আরও প্রবল হইল । তিনি গোবিন্দলালকে বলিলেন, “কৰ্ত্তারা একে একে স্বর্গারোহণ করিলেন, এখন আমার সময় নিকট হইয়া আসিল । তুমি পুত্রের কাজ কর ; এই সময় আমাকে কাণী পাঠাইয়া দাও।” -
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।