দ্বিতীয় খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদ প্রথম বৎসর হরিত্রাগ্রামের বাড়ীতে সংবাদ আসিল,—গোবিন্দলাল, মাতা প্রভৃতি সঙ্গে, নিৰ্ব্বিঘ্নে মুস্থ শরীরে কাশীধামে পৌঁছিয়াছেন। ভ্রমরের কাছে কোন পত্র আসিল না। অভিমানে ভ্রমরও পত্র লিখিল না। পত্রাদি আমলাবর্গের কাছে আসিতে লাগিল । এক মাস গেল, দুই মাস গেল। পত্রাদি আসিতে লাগিল। শেষ এক দিন সংবাদ আসিল যে, গোবিন্দলাল কাশী হইতে বাট যাত্রা করিয়াছেন। ভ্রমর শুনিয়া বুঝিল যে, গোবিন্দলাল কেবল মাকে ভুলাইয়া, অন্যত্র গমন করিয়াছেন। বাড়ী আসিবেন এমন ভরসা হইল না । এই সময়ে ভ্রমর গোপনে সৰ্ব্বদা রোহিণীর সংবাদ লইতে লাগিল । রোহিণী রাধে বাড়ে, খায়, গা ধোয়, জল আনে। আর কিছুই সংবাদ নাই। ক্রমে এক দিন সংবাদ আসিল, রোহিণী পীড়িত। ঘরের ভিতর মুড়ি দিয়া পড়িয়া থাকে, বাহির হয় না। ব্রহ্মানন্দ আপনি রণধিয়া খায়। তার পর এক দিন সংবাদ আসিল যে, রোহিণী কিছু সারিয়াছে, কিন্তু পড়ার মূল যায় নাই। খুলরোগ--চিকিৎসা নাই—রোহিণী আরোগ্য জন্য তারকেশ্বরে হত্যা দিতে যাইবে। শেষ সংবাদ—রোহিণী হত্য দিতে তারকেশ্বর গিয়াছে। একাই গিয়াছে—কে সঙ্গে যাইবে ? এ দিকে'তিন চারি মাস গেল—গোবিন্দলাল ফিরিয়া আসিল না। পাচ মাস ছয় মাস হইল, গোবিন্দলাল ফিরিল না। ভ্রমরের রোদনের শেষ নাই। কেবল মনে করিত, এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন—সংবাদ পাইলেই বাচি। এ সংবাদও পাই না কেন ? শেষ ননন্দাকে বলিয়া শাশুড়ীকে পত্র লিখাইল—আপনি মাতা, অবশ্য পুত্রের সংবাদ পান। শাশুড়ী লিখিলেন, তিনি গোবিন্দলালের সংবাদ পাইয়া থাকেন। গোবিন্দলাল প্রয়াগ, মথুরা, জয়পুর প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করিয়া আপাততঃ দিল্লী অবস্থিতি করিতেছেন। শীঘ্র সেখান হইতে স্থানান্তরে গমন করিবেন। কোথাও স্থায়ী হইতেছেন না। এ দিকে রোহিণীও আর ফিরিল না। ভ্রমর ভাবিতে লাগিলেন,ভগবান জানেন, রোহিণী কোথায় গেল। আমার মনের সন্দেহ আমি পাপমুখে ব্যক্ত করিব না। ভ্রমর আর সহ
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।