r*, প্রথম খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদ হরিদ্রাগ্রামে এক ঘর বড় জমাদার ছিলেন। জমীদার বাবুর নাম কৃষ্ণকান্ত রায় । কৃষ্ণকান্ত রায় বড় ধনী; তাহার জমাদারীর মুনাফা প্রায় দুই লক্ষ টাকা। এই বিষয়টা র্তাহার-ও তাহার ভ্রাতা রামকান্ত রায়ের উপাজ্জিত। উভয় ভ্রাতা একত্রিত হইয়া ধনোপার্জন করেন। উভয় ভ্রাতার পরম সম্প্রীতি ছিল, একের মনে এমত সন্দেহ কস্মি কালে জন্মে নাই যে, তিনি অপর কর্তৃক প্রবঞ্চিত হইবেন। জমীদারী সকলই জ্যেষ্ঠ কৃষ্ণকাম্ভের নামে ক্রীত হইয়াছিল। উভয়ে একান্নভূক্ত ছিলেন। রামকান্ত রায়ের একটি পুত্র জন্সিয়াছিল— তাহার নাম গোবিন্দলাল। পুত্রটির জন্মাবধি, রামকান্ত রায়ের মনে মনে সংকল্প হইল যে, উভয়ের উপার্জিত বিষয় একের নামে আছে, অতএব পুত্রের মঙ্গলার্থতাহারবিহিতলেখাপড় করিয়া লওয়া কৰ্ত্তব্য। কেন না, যদিও তাহার মনে নিশ্চিত ছিল যে, কৃষ্ণকান্ত কখনও প্রবঞ্চনা অথবা তাহার প্রতি অন্যায় আচরণ করার সম্ভাবনা নাই, তথাপি কৃষ্ণকাম্ভের । পরলোকের পর তাহার পুত্রেরা কি করে, তাহার নিশ্চয়তা কি ? কিন্তু লেখাপড়ার কথা সহজে বলিতে পারিলেন না—আজি বলিব, কালি বলিব, করিতে লাগিলেন। একদা প্রয়োজনবশতঃ তালুকে গেলে সেইখানে অকস্মাৎ তাহার মৃত্যু হইল। যদি কৃষ্ণকান্ত এমত অভিলাষ করতেন যে, ভ্রাতৃপুত্রকে বঞ্চিত করিয়া সকল সম্পত্তি এক ভোগ করিবেন, তাহা হইলে তংসাধন পক্ষে এখন আর কোন বিস্তু ছিল না। কিন্তু কৃষ্ণকাস্তুের এরূপ অসদভিসন্ধি ছিল না। তিনি গাবিন্দলাললৈ আপন সংসারে আপন পুত্রদিগের সহিত সমান ভাবে প্রতিপালন করিতে লাগিলেন, এবং উইল করিয়া আপনাদিগের উপার্জিত সম্পত্তির যে অৰ্দ্ধাংশ স্থায়মত রামকান্ত রায়ের প্রাপ্য তাহ গোবিন্দলালকে দিয়া যাইবার ইচ্ছা করিলেন। কৃষ্ণকান্ত রায়ের দুই পুত্র, আর এক কন্যা। জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম হরলাল, কনিষ্ঠের নাম বিনােদাল, কন্যার নাম শৈলবর্তী। কৃষ্ণকান্ত এইরূপ উইল করিলেন যে, তাহার পরলোকা,গোবিনলাল আট আনা হরলাল ও বিনোদলাল প্রত্যেকে তিন আন গৃহিনী এক আন, আর শৈলবতী এক আন সম্পত্তিতে অধিকারিণী হইবেন।
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।