b-8 কৃষ্ণকান্তের উইল মা। ভয় নাই। এবার প্রসাদপুর হইতে কোন কোন নম্বরের নোট পাইয়াছ, বল দেখি। পুলিসের লোক আমার কাছে নোটের নম্বর রাখিয়া গিয়াছে। যদি সে নম্বরের নোট না হয়, তবে ভয় কি ? নম্বর বদলাইতে কতক্ষণ ? এবারকার প্রসাদপুরের পত্ৰখানি লইয়া আইস দেখি-নোটের নম্বর দেখি । ব্ৰহ্মানন্দ যায় কি প্রকারে ? ভয় করে-কনষ্টেবল যে গাছতলায়। মাধবীনাথ বলিলেন, “কোন ভয় নাই, আমি সঙ্গে লোক দিতেছি ।” মাধবীনাথের আদেশমত এক জন দ্বারবান ব্রহ্মানন্দের সঙ্গে গেল। ব্রহ্মানন্দ রোহিণীর পত্র লইয়। আসিলেন। সেই পত্রে, মাধবীনাথ যাহা যাহা খুজিতেছিলেন, সকলই পাইলেন। পত্র পাঠ করিয়া ব্রহ্মানন্দকে ফিরাইয়া দিয়া বলিলেন, “এ নম্বরের নোট নহে । কোন ভয় নাই—তুমি ঘরে যাও। আমি কন্ষ্টেবলকে বিদায় করিয়া দিতেছি।” ব্ৰহ্মানন্দ মৃতদেহে প্রাণ পাইল । উৰ্দ্ধশ্বাসে তথা হইতে পলায়ন করিল। মাধবীনাথ কন্যাকে চিকিৎসার্থ স্বগৃহে লইয়া গেলেন। তাহার চিকিৎসার্থ উপযুক্ত চিকিৎসক নিযুক্ত করিয়া দিয়া, স্বয়ং কলিকাতায় চলিলেন। ভ্রমর অনেক আপত্তি করিল— মাধবীনাথ শুনিলেন না। শীঘ্রই আসিতেছি, এই বলিয়া কন্যাকে প্রবোধ দিয়া গেলেন । কলিকাতায় নিশাকর দাস নামে মাধবীনাথের এক জন বড় আত্মীয় ছিলেন। নিশাকর মাধবীনাথের অপেক্ষ আট দশ বৎসরের বয়ঃকনিষ্ঠ। নিশাকর কিছু করেন না— পৈতৃক বিষয় আছে—কেবল একটু একটু গীতবাদ্যের অনুশীলন করেন। নিষ্কৰ্ম্ম বলিয়া সৰ্ব্বদা পৰ্য্যটনে গমন করিয়া থাকেন। মাধবীনাথ তাহার কাছে আসিয়া সাক্ষাৎ করিলেন । অন্যান্ত কথার পর নিশাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন হে, বেড়াইতে যাইবে ?” নিশা । কোথায় ? : মা । যশোর । নি। সেখানে কেন ? মা। নীলকুঠি কিনা। নি। চল । তখন বিহিত উদ্যোগ করিয়া দুই বন্ধু দুই এক দিনের মধ্যে যশোহরাভিমুখে যাত্র করিলেন। সেখান হইতে প্রসাদপুর যাইবেন।
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।