ఫిe কৃষ্ণকাস্তের উইল গোবিন্দ্রলাল তাহ কিছুই বুঝেন নাই। পূৰ্ব্বকার উগ্রভাব পরিত্যাগ করিয়া বলিলে । “আমার অনুমতি লণ্ডয়া অনাবশ্বক। বিষয় আমার স্ত্রীর, আমার নহে, বোধ হয় তাহা । জানেন । তাহার যাহাকে ইচ্ছা পত্তন দিবেন, আমার বিধি নিষেধ নাই। আমিও কিছু লিখিব না। বোধ হয় এখন আপনি আমাকে অব্যাহতি দিবেন।” . - কাজে কাজেই নিশাকরকে উঠিতে হইল। তিনি নীচে নামিয়া গেলেন। নিশাকর গেলে, গোবিন্দলাল দানেশ খাকে বলিলেন, “কিছু গাও।” দানেশ খী প্রভুর আজ্ঞা পাইয়া, আবার তল্লুরায় স্বর বাধিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি গাইব ?” “যা খুসি।” বলিয়া গোবিন্দলাল তবলা লইলেন। গোবিন্দলাল পূর্বেই কিছু কিছু । বাজাইতে জানিতেন, এক্ষণে উত্তম বাজাইতে শিখিয়াছিলেন ; কিন্তু আজি দানেশ থার সঙ্গে র্তাহার সঙ্গত হইল না, সকল তালই কাটিয়া যাইতে লাগিল। দানেশ খ বিরক্ত হইয়া তম্বুরা ফেলিয়া গীত বন্ধ করিয়া বলিল, “আজ আমি ক্লান্ত হইয়াছি।” তখন গোবিন্দলাল একটা সেতার লইয়া বাজাইবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু গৎ সব ভুলিয়া যাইতে লাগিলেন। সেতার ফেলিয়া নবেল পড়িতে আরম্ভ করিলেন। কিন্তু যাহা পড়িতেছিলেন, তাহার অর্থবোধ হইল না। তখন বহি ফেলিয়া গোবিন্দলাল শয়নগৃহমধ্যে গেলেন । রোহিণীকে দেখিতে পাইলেন না, কিন্তু সোণ চাকর নিকটে ছিল । দ্বার হইতে গোবিন্দলাল, সোণাকে বলিলেন, “আমি এখন একটু ঘুমাইব, আমি আপনি না উঠিলে আমাকে কেহ যেন উঠায় না।” এই বলিয়া গোবিন্দলাল শয়নঘরের দ্বার রুদ্ধ করিলেন । তখন সন্ধ্যা প্রায় উত্তীর্ণ হয়। দ্বার রুদ্ধ করিয়া গোবিন্দলাল ত ঘুমাইল না। খাটে বসিয়া, দুই হাত মুখে দিয়া কাদিতে আরম্ভ করিল। কেন যে কাদিল, তাহা জানি না। ভ্রমরের জন্য কাদিল, কি নিজের জন্ত কঁাদিল, তা বলিতে পারি না । বোধ হয় দুইই। -- - আমরা ত কান্না বৈ গোবিন্দলালের অন্য উপায় দেখি না। ভ্রমরের জন্য র্কাদিবার পথ আছে, কিন্তু ভ্রমরের কাছে ফিরিয়া যাইবার আর উপায় নাই । হরিদ্রাগ্রামে আর মুখ দেখাইবার কথা নাই। হরিদ্রাগ্রামের পথে কাটা পড়িয়াছে। কান্না বৈ ত আর উপায় নাই ।
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।