পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৩
হেমলক

এ’যে মনে হচ্ছে ইলার গলার স্বর। দিব্যেন্দুর স্ত্রীর। কিন্তু অপর ব্যক্তি যে ওর কথার উত্তর দিলে সে তো দিব্যেন্দু নয়!

 “যা’ করতে চাই সে তো তুমি জানো, অনর্থক ন্যাকা সাজচো কেন? আমার উদ্দেশ্য যদি সিদ্ধ না হয়, ঝাড়ে বংশে সব্বাই শেষ হবে এ-ও জেনে রেখো এবং তার জন্যে প্রস্তুত থেকো, তোমায় আর সাতটি দিন মাত্র সময় দিলাম। এই আমার শেষ নোটীশ।”

 কেতকীবনের অন্তরাল থেকে নিশাচর ও নিশাচরীরা কখন কোন দিক দিয়ে চলে গেছে জানতে পারিনি, আমার কানে নিজেরই মাথায় চড়চড় করে রক্ত উঠে ঝম্ ঝম্ শব্দে তাল বাজাচ্ছিল। এ কি শুনলেম? সত্যি শুনেছি, না এসব নাইটমেয়ার মাত্র? স্বপ্নই সম্ভব! কেউ তো কোথাও নেই, ঝিঁঝির অখণ্ড সঙ্গীতই তো শুধু গাছগুলোর মধ্যে ধ্বনিত হচ্ছে! মানুষের কণ্ঠ এর মধ্যে থেকে হঠাৎ নাটকীয় ভঙ্গীতে বড় বড় রহস্যময় সংলাপ শুনিয়ে দিয়ে তেমনি সহসা কোথায় বা এক মুহূর্ত্তে মিলিয়ে গেলো। এ-ও কি কখন সম্ভব? না, এ দিব্যেন্দুদের জটিল পরিস্থিতির বিষয়ে অত্যন্ত সহানুভূতির বশে উদ্ভট কল্পনার ফলেই ঐ রকম একটা কাল্পনিক দৃশ্য বা অদৃশ্য অভিনয় মাথার মধ্যেই সৃষ্টি হলো। একটা ‘ক্যাফি-অ্যাসপিরিণ’ গলাধঃকরণ করে জল খেয়ে বিছনায় ঢুকে শুয়ে পড়লেম। ঘুমটা এসে গেলেই মাথাটা ক্লীয়ার হয়ে যাবে। এ-বাড়ীর যা ব্যবস্থা দেখেছি, তাতে বাইরে থেকে রাত্তির বেলা ‘ফোরটীফায়েড’ এই বাড়ী বা জেলখানার মধ্যে কোন লোকের আসতে পারা কখনই সম্ভব নয়।

 সকালবেলা চায়ের টেবিলে উপস্থিত হয়ে দেখলাম দিব্যেন্দু তখনও আসেনি, ইলা দেবী সমস্ত খাদ্য-সরঞ্জাম প্রস্তুত করিয়ে নিয়ে আমাদের প্রতীক্ষা করছেন। ঘরে ঢুকেই সর্ব্বপ্রথম তাঁর মুখের দিকে দৃষ্টিটা একটু তীক্ষ করেই নিক্ষেপ করলেম। গত রাত্রের