পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৫
হেমলক

করেছিলেম—একটি ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে এই নিঃসার জীবনটাকে একটুখানি রাঙিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আপনি জানেন না, আমি বড়দের চাইতে বাচ্চাদেরই বেশী ভালবাসি।”

 ইলার সুন্দর মুখখানি গম্ভীর হয়ে গেল, সে একটুক্ষণ নীরব থেকে একটি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললে, “আমি তাকে আনছি, তবে তাকে দেখে আপনি সুখী হতে পারবেন না। সে মানুষের সন্তান হলেও একটি কাঠের পুতুলের মতন, রং তাতে ফোটেইনি, সে আপনার মনকে কি দিয়ে রাঙাবে।”

 আমাদের প্রাতঃরাশ সমাপ্ত হয়ে গেছলো, ইচ্ছা করেই বাইরের দিক থেকে মধ্যের বড় ড্রইংরুমে এসে বসলেম। ইলা দেবী আমার এই বিবেচনা বুদ্ধির সম্ভবতঃ মনে মনে তারিফই করলেন, দেখলেম সেটা প্রকট হয়ে উঠলো তাঁর ঈষৎ প্রসন্ন মুখভাবে।

 ইলা দেবীর পাশাপাশি তাঁরই প্রায় সমবয়সের একটি মহিলা দিব্যেন্দুর মেয়েকে কোলে করে ঘরে ঢুকলেন। এরই কথা দিব্যেন্দু বোধ করি আমায় বলেছিল, ইলা দেবীর পরিচিতা,—না আত্মীয়া,— ঐ রকমই কি যেন কি একটা হন।

 মেয়েটি সত্যি সত্যিই একটি রংচটা বড় কাঠের পুতুল! কালীঘাটে আগে যেমন খোদাই করা পুতুল একটি পয়সা দিলেই পাওয়া যেত। সাদা দুধের মত রং, রক্তের যেন তাতে লেশমাত্র নেই, গায়ের চামড়া যেন পার্চমেণ্ট কাগজের মত স্বচ্ছ। শরীরের প্রত্যেকটি শিরা-উপশিরা হাড়-পাঁজরা সমস্তই একটি একটি করে গোনা যায় ট্রান্‌স্‌পারেণ্ট কাঁচের গ্লাসের মধ্যে রাখা বাসি এক মুঠো ঝরো-ঝরো জুঁই-ফুল। অভিভাবিকার শিক্ষা মত ইংরেজী-কেতায়—“টাটা” এবং বাংলায় নমস্কার জানালে, গলার ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বর পাখীর বাচ্চার কাকলীর মতই ক্ষীণ ও অস্ফুট।