অনুকম্পার সঙ্গে সেইদিকে চেয়ে উচ্চারণ করলেম, “আহা বেচারী!” কিন্তু দয়া তাঁকে না করে করলেম তাঁর মেয়েকে। সেও তো আর কম বেচারী নয়, বরং ঢের বেশীই। সমস্ত জীবনটাই তো তার সামনে পড়ে আছে অফলা হয়ে।
খেলনার দোকান তার ঘরে, সে কিন্তু আর সেদিকে ফিরেও চায় না। “আঙ্কাল দাই”—এই হল তার সর্ব্বক্ষণের মুখের বুলি। আমিও তাকে সহজে হাতছাড়া করি না। মিসেস পাকড়াসীর একান্ত ভয় ব্যগ্রতা অস্থির আগ্রহ কিছুকেই আমল না দিয়ে ওঁর “ওয়ার্ডটি”কে যথাশক্তি নিজের হস্তগত করে নিতে লাগলেম। এমন কি দিব্যেন্দু ও ইলা দেবীকে বলে ওর খাওয়ানোর ভারটাও জোর করে নিজের হাতে ছিনিয়ে নিলেম। ফলের রস, মেডিকেটেড ফুড সব বন্ধ করে দিয়ে খাঁটি দুধ ষ্টীমে জল বসিয়ে তাতেই গরম করে এবং নিজের সঙ্গে চারটি করে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করলেম। বেশ বুঝতে পারি ইলা খুব ভয় পায়, কিন্তু এত ভদ্র যে নিজের দেওয়া কথা সে কিছুতেই ভাঙ্গে না। বিবর্ণ মুখে চট করে সেখান থেকে সরে যায়। বেশ দেখতে পেলেন ঐ মেয়েটি “মৃদুনিকুসুমাদপি” হলেও “বজ্রাদপি কঠিনও” বটে? সত্যের সে পূজারিণী। আমার হাতে মেয়ের সমস্তটা ছেড়ে দেবে কথা দিয়েছে, কথার খেলাপ সে কিছুতেই করবে না। অবশ্য এটাও ঠিক যে ঐ ত্যাগ স্বীকারের প্রত্যক্ষ ফল সে সঙ্গে সঙ্গেই ফলতে দেখতেও তো পাচ্ছিল। এক হপ্তার ভিতরেই কি আশ্চর্য্য পরিবর্ত্তনই না ঐ আধমরা মেয়েটার হয়েছে! সে এখন কোলে বড় একটা চড়ে না, আমার আঙ্গুল ধরে হেঁটে বেড়ায়। নিজের হাতে প্লেটে ছড়িয়ে দেওয়া শুকনো ভাত, গরম ভাজা খই, বিস্কুটের টুকরো তুলে তুলে খায়। কমলালেবুর কোয়া চোষে, বেদানা চিবোয়, আবার চেঁচিয়ে ডাকে, “আঙ্কাল! এতো।”