পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৭
হেমলক

বাঙ্গালীত্বের অভিমান তাঁর সুদৃঢ় ছিল। এত দূরেও তিনি এদের জন্যে বাংলা মাষ্টার রেখে দেন এবং উত্তম ইংরাজী শিক্ষার জন্য কনভেণ্টে ভর্ত্তি করেন। মা পাঞ্জাবী হলেও তারা যাতে বাংলা ও ইংরাজীতে সর্ব্বদা কথাবার্ত্তা কয় তার দিকে প্রখর দৃষ্টি রাখতেন। নিরক্ষরা স্ত্রীকেও লেখাপড়ার সঙ্গে পাঞ্জাবী বুলি পরিহার করাতে যথেষ্ট অধ্যবসায় দেখিয়েছিলেন। অতীতকে তিনি সম্পূর্ণ রূপে ধুয়ে ফেলতে চাইছিলেন।

 সূযি কিন্তু তার জাতীয় ধর্ম্ম পরিত্যাগ করতে পারলো না। যত বড় হতে লাগলো, ততই সে দুর্দ্দান্ত হয়ে উঠলো। প্রখর বুদ্ধি নিয়ে বিদ্যা ছেড়ে সে নিয়ত অবিদ্যারই চর্চ্চা করে চল্লো। তার পালক পিতা অনেক চেষ্টা করেও তাকে সেপথ থেকে ফেরাতে পারলেন না। তার মায়ের মেয়েকে সে দুটি চোখে দেখতে পারতো না। মৌখিকই নয়, যতদূর পারে শারীরিক অত্যাচারও তার উপর সে যৎপরোনাস্তি করে চলেছিল। তারপর···সংক্ষেপেই বলি, না হলে সত্তর পৃষ্ঠা লিখেও এ কাহিনী শেষ করতে পারব না। ছেলের অত্যাচারে অনাচারে মর্ম্মাহত মা একেবারে মর্ম্মে মরে গেলেন। ঐ ছেলের উপর কি জানি কেন যে তাঁর একটা উৎকট ভালবাসা ও অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল। মেয়ের প্রতি যেন সে তুলনায় ঢের কম। যাই হোক, মাতৃস্নেহ হয়ত কুসন্তানের প্রতি সমধিক হয়েই থাকে,— এইটেই ত প্রসিদ্ধি। কিন্তু মেয়ের প্রতি যে নিদারুণ অভিশাপের মতই মৃত্যুমুহূর্ত্তে তাকে দিয়ে কঠিনতম দিব্য দিয়ে শপথ করিয়ে গেলেন, কোন মা অন্ততঃ বাংলা দেশের মা হলে হয়ত তা পারতেন না। ঐ ছেলের সমস্ত জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ভার তার উপর ন্যস্ত করলেন। সে মেয়ের তখন বয়স বা কত, জীবনের অভিজ্ঞতাই বা কি, সে দাদাকে অন্তর দিয়েই ভালবাসে,—সহোদর ভাইয়ের প্রতি