পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
২২

 কেন তাহা চন্দ্রকুমারই, বলিলেন, চীৎকার শব্দে ধমক দিয়া উঠিলেন, “আজকের দিনে তোর চোখে জল কিসের জন্যে শুনি? মা আসছে ঘরে,—নিজেরই মা সে তোর, তোর সৎমাকে তো আর ঘরে আনছিনে, তবে আবাগের বেটী! তুই কাঁদিস্ কি জন্যে শুনি? কেন? কলের জলের মতন চোখের জলে সরকার ট্যাক্স বসায়নি বলে? আমায় যদি কর্পোরেশনের মেয়র করে আমি তাই করবো,—হ্যাঁ, দেখিস তোরা ছিঁচকাদুনীরা—! নিশ্চয় করবো ওই আইনটি, বাছাধনদের কাঁদার সুখটি বার করছি,—এই দেখো না।”

 এই কথা! সুনীতি হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিল, মনে এক রকম আর মুখে আর এক রকমের হাসি আনিয়া উৎসাহ প্রকাশ করিয়া কহিয়া উঠিল, “আমি তো কাঁদিনি বাবা! মা আসবেন, তাই সব ঝাড়া-ঝুড়ি করছিলাম কি না, ধুলো না পোকা কি একটা চোখে পড়েছিল, তার জন্যে অত জল পড়ছে। এখন তুমি চলো দেখি, চা করে আনিগে, আজ তোমার চায়ের সঙ্গে একটু গরম হালুয়া করে দিই কেমন? আর নিমকী ভেজেও রেখেছি, আগে সেগুলি পেট ভরে খেয়ে নাও,হয়ত অনেক রাত হয়ে যাবে খেতে।”

 খাবারের রেকাব টানিয়া লইয়াই চন্দ্রকুমার ঈষৎ মুখ বিকৃত করিলেন, “এ কি করেছিস্! হালুয়াতে কর্পূর দাওনি তো! জানিসনে নাকি, এত বড় ধেড়ে মেয়ে তুই, তোর মা কি কি পছন্দ করতেন?”

 সহাস্যে সুনীতি উত্তর করিল, “খেয়ে দেখেই বলো, না খেয়েই রাগ করছো কেন? কেমন? দিইনি?”

 “দিয়েছিস,—কিন্তু চিনেবাদাম—”

 “চামচ দিয়ে আর একটু ভাঙ্গো,—মৌরি, ছোট এলাচ, কিসমিস, চিনেবাদাম সব দিয়েছি। ভাল হয়নি?”