“হুঁঃ! এ তোকে আর করতে হয় না, তোর মা এসে নিজে হাতে করে দিয়ে গেছে! খেয়েই দেখ না কেন? তোর দ্বারা, উনি চলে যাবার পর একটি দিনও কি ঠিক এমনটি হয়েছিল?—তবে হ্যাঁ,—নিজের কোলে যদি ঝোল টানো, সে অবশ্য আলাদা কথা!”
সুনীতি এই অবমাননাজনক বিদ্রূপে আজ একটুও আহত হইল না, যেন সে গভীর অন্ধকারের মধ্যে এতটুকু একটুখানি আলোর সন্ধানই পাইল, সাগ্রহ কণ্ঠে কহিয়া উঠিল, “ঠিক বলেছ বাবা! এ মায়েরই হাতের করণ! আর শোন, একটা কথা বলি, তুমি হয়ত বিশ্বাস না-ও করতে পারো, যখন আমি হালুয়া করবার জন্যে ষ্টোভে কড়া চাপালুম না, অমনি লক্ষ্মীবিলাস তেলের গন্ধ পেলুম, তুমি তো জানো, মা ও ছাড়া কক্ষনো অন্য কোন তেলই মাখতেন না!”
চন্দ্র কুমার হা হা করিয়া উচ্চকণ্ঠে হাসিয়া উঠিলেন,—“মনে আবার নেই, খুব আছে। তোর মা-টি কি কম দুষ্টু ছিল! ওর যত সব পুরোণ-চালের জিনিষের পছন্দ! গোলাপ জল, কেওড়া, অতির, কর্পূর, জর্দ্দা খেতেন, সেও মৃগনাভী আর কেশর দেওয়া। বিলিতী এসেন্স নিজে তো মাখতেনই না, আমি কখন মেখে এলে নাকে কাপড় গুঁজে বলতেন, ‘এ মাঃ! ঘরের মধ্যে সাতটা ছুঁচো চরে গেল কখন! সোজা দুষ্টু ও!”
শেবের মন্তব্যটুকু হাসির পরিবর্ত্তে কান্নার মতই শুনাইল। আঃ ভগবান! এত ভালবাসার বস্তুকে এমন করিয়া কেনই বা তুমি কাড়িয়া লও? একটুও কি কষ্ট হয় না তোমার একাজ করতে? অথচ ‘ভাগ্যিমানের বউ মরে’ বলিয়া একটা প্রবাদ কথাও তো এই বাংলা দেশেই বহুকাল ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে!
সুনীতি চন্দ্রকুমারের ধুতি পাঞ্জাবী আনিয়া তাঁকে পরাইয়া দিল, ঘরকন্না যতদূর সম্ভব গোছগাছ করিয়া রাখিল, ফুল আর